Samakal | Rss Feed
থমথমে গোয়ালন্দ, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ, গ্রেপ্তার ৫
সারাদেশ
আজু শিকদার, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) <time class="op-modified" dateTime="2025-09-07"2025-09-07
2025-09-07
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার এলাকায় আজও (রোববার) থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। দরবার ও বাড়ির ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। এ ঘটনায় পুলিশ শনিবার রাতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে শুক্রবার গোয়ালন্দ দরবার শরীফে হামলায় নিহত যুবক মো. রাসেল মোল্লার (২৮) বাড়িতে এখন শুধুই স্বজনদের আহাজারি। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে। রাসেল মোল্লা মোস্তফা মেটাল ইন্ড্রাস্ট্রিজে গাড়ি চালকের কাজ করতেন। তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে রাসেল মোল্লার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
শনিবার দুপুরে রাসেল মোল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহ তখনও বাড়িতে পৌঁছেনি। এরই মধ্যে বাড়িতে স্বজনরা ভিড় করেন। বাবা আজাদ মোল্লার কোলে রাসেল মোল্লার পাঁচ বছর বয়সী শিশু নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসমিন। ছোট্ট ইয়াসমিন দাদুকে মৃতদেহের খাটিয়া দেখিয়ে বলছে, ‘দাদু এটা দিয়ে কি করে?’ পাশের একজন উত্তর দিচ্ছে, ‘এখানে তোমার আব্বুকে শোয়ানো হবে।’ ইয়াসমিন তার দাদুকে বলছে, ‘তাহলে ঘর থেকে বালিশ এনে দাও, আব্বু এখানে শুবে।’
এ সময় আজাদ মোল্লা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলে কার কি ক্ষতি করেছিল যে তাকে হত্যা করতে হলো। সে কোম্পানির গাড়ি চালায়, শুক্রবারের দিন গোয়ালন্দ দরবারে গিয়েছিল। এতে কার এতবড় ক্ষতি করে ফেলেছিল। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেও আবার হামলা করে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এখন এই অবুঝ শিশু দু’টির ভবিষ্যত দেখবে কে? পরিবারে রাসেলই একমাত্র উপার্জক্ষম ছিল।’
স্থানীয়রা জানান, রাসেল খুবই শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কোনোদিন কারও সঙ্গে তার ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে, তা কেউ দেখেনি।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা তিনটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় ‘নুরাল পাগলা’র দরবার বাড়িতে হামলা চালায় কথিত ‘তৌহিদী জনতা’। হামলাকারীরা ১৩ দিন আগে কবর দেওয়া নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে উল্লাস করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় পুড়িয়ে দেয়। এরপর মরদেহের অবশিষ্ট ছাই ও দেহাবশেষ পদ্মা নদীর পানিতে ফেলে দেয়।
উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রথমে হামলায় পাঁচজন পুলিশ সদস্য ও প্রশাসনের দু’জনসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। পুলিশের দুটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় আহত হয়ে মারা যান রাসেল মোল্লা।