Google Alert – সামরিক
নাইজেরিয়ার উত্তর–পূর্বাঞ্চলের বোর্নো রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় সেনা সহ অন্তত ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে দারুল জামাল শহরে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে নাইজেরিয়া–ক্যামেরুন সীমান্তে একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন সেনাসদস্য ছিলেন।
ক্যামেরুন সীমান্তের কাছে অবস্থিত দারুল জামার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে এই হামলা হয়। বোকো হারামের জঙ্গিরা মোটরসাইকেলে এসে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়ার কমান্ডার বাবাগানা ইব্রাহিম বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, এই হামলায় ৬ সেনাসদস্যসহ ৫৫ জন নিহত হয়েছেন।
দারুল জামার ঐতিহ্যবাহী প্রধান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আশপাশের ঝোপঝাড়ে আরও অনেক বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা করেছে এবং নারীদের ছেড়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০টির বেশি বাড়ি এবং ১০টি বাস ধ্বংস করা হয়েছে।
নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বোকো হারাম এবং এর বিচ্ছিন্ন দল আইএসআইএল (আইএসআইএস)-এর পশ্চিম আফ্রিকার সহযোগী (আইএসডব্লিউএপি) জঙ্গিদের দমনের জন্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা বোর্নো রাজ্যে অভিযান জোরদার করেছে।
এএফপি একটি নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই এলাকাটি বোকো হারাম কমান্ডার আলী গুলদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তিনিই এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বাবাগানা মালা নামে একজন বাসিন্দা, যিনি সৈন্যদের সাথে ৪৬ কিমি (২৯ মাইল) দূরে বামা শহরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, সামরিক বাহিনীকে তিন দিন ধরে গ্রামের কাছে বোকো হারামের সমাবেশের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানো হয়নি।
তিনি বলেন, ‘তারা সৈন্যদের পরাস্ত করেছিল, যারা আমাদের সাথে বামা পালিয়ে গিয়েছিল।’
অনেক নিহত ব্যক্তিই বামার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাস্তুচ্যুত ক্যাম্প থেকে সম্প্রতি স্থানান্তরিত পরিবারগুলোর সদস্য ছিলেন, যা কর্তৃপক্ষ এই বছর বন্ধ করে দিয়েছে।
হামলায় ভাইকে হারানো পাঁচ সন্তানের জননী হাজ্জা ফাতি বলেন, ‘সরকার আমাদের বলেছিল যে আমরা এখানে নিরাপদ থাকব। এখন আমরা আবার আমাদের স্বজনদের দাফন করছি।’
এই হামলা নাইজেরিয়ার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাস্তুচ্যুতদের ক্যাম্প বন্ধ করে তাদের গ্রামে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তক্ষয়ী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আইএসডব্লিউএপি ২০১৬ সালে এই গোষ্ঠী থেকে বিভক্ত হয়।
অলাভজনক সংস্থা গুড গভর্ন্যান্স আফ্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপের পুনরুত্থান দেখা গেছে। তারা প্রায় ৩০০টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে। যার বেশিরভাগই আইএসডব্লিউএপি দ্বারা সংঘটিত। এতে প্রায় ৫০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
সূত্র : আল-জাজিরা
ডিএস