Samakal | Rss Feed
জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল কেন শীতল লাদাখ
বিশ্ব
সমকাল ডেস্ক 2025-09-26
ভারতের হিমালয় অঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লাদাখ উপত্যকা। সম্প্রতি ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রে ছিল এই উপত্যকা। বুধবার জেন-জি নেতৃত্বাধীন সহিংস বিক্ষোভের মাধ্যমে উত্তাল হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। বিক্ষুব্ধ তরুণরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আঞ্চলিক কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে।
কাশ্মীরের লাদাখে পৃথক রাজ্য ও চাকরিতে কোটার দাবিতে বুধবার পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভের সমন্বয়কারীরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংঘর্ষে বহু সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মীও আহত হয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে লাদাখে আর কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও চারজনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। লাদাখের রাজধানী লেহেতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে কারফিউ জারি করেছে সরকার। লাদাখে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের। বিক্ষোভে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে এবং লাদাখের সঙ্গে সংহতি জানাতে গতকাল ওই অঞ্চলের কারগিল শহরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কারগিল জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) ডাকে কমপ্লিট শাটডাউন চলছে। সংগঠনটি কারগিলে রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তপশিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। লাদাখের লেহতে একই দাবিতে আন্দোলন করছে লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)।
কেডিএ নেতা সাজাদ কারগিলি বলেন, লাদাখের লেহতে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গে সংহতি জানাতেই এ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
তরুণদের মূল দাবি কী?
লাদাখ একটি উচ্চতর শীতল মরুভূমি অঞ্চল। প্রায় ছয় বছর ধরে লাদাখের হাজার হাজার মানুষ স্থানীয় নাগরিক সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে বৃহত্তর সাংবিধানিক সুরক্ষা ও ভারতের কাছ থেকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দাবি করে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও অনশন করছেন। লাদাখবাসী চান একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ক্ষমতা। ২০১৯ সাল থেকে অঞ্চলটিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শাসন করছে।
শান্তিপূর্ণ পথ ছাড়লেন বিক্ষোভকারীরা
বুধবার মোহভঙ্গ হওয়া তরুণরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে সরে আসে। অনশন ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষাবিদ সোনাম ওয়াংচুক জানান, এটা ছিল যুবকদের একটি বিস্ফোরণ, এক ধরনের জেন-জি বিপ্লব, যা তাদের রাস্তায় নামিয়েছে। তিনি নেপালে সম্প্রতি সরকার পতনের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক উত্থানগুলোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
ইতিহাসের ‘রক্তাক্ত দিন’
অনশন ধর্মঘটের সমন্বয়কারী জিগমত পালজোর বলেছেন, এটা লাদাখের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। ধর্মঘটের দাবিগুলো সমর্থন করতে রাস্তায় নামা আমাদের তরুণদের তারা হত্যা করেছে।
ষষ্ঠ তপশিল ও বেকারত্বের ক্ষোভ
ছয় বছর আগে রাজ্যের মর্যাদা চলে যাওয়ায় লাদাখিরা এখন আমলাদের শাসনের অধীনে রয়েছেন। লাদাখের ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তপশিলি উপজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এই কারণে তারা ভারতের সংবিধানে ষষ্ঠ তপশিলে লাদাখকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। ষষ্ঠ তপশিল এমন অঞ্চলগুলোতে স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন ও শাসন কাঠামো সরবরাহ করে, যেখানে স্বীকৃত আদিবাসী সম্প্রদায়ের আধিপত্য রয়েছে।