কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যা: ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল : সংবাদ অনলাইন

Google Alert – সশস্ত্র

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ বৃহস্পতিবার ৩৯ পৃষ্ঠার এই অভিযোগ দাখিল করা হয়।

অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছে; ওই দিন ইনুকে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কৌঁসুলি মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন।

পুলিশ গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে। বিভিন্ন মামলায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কৌঁসুলি মিজানুল ইসলামের বক্তব্যে বলা হয়, “শেখ হাসিনার ভাষায় রণক্ষেত্রের সহযোদ্ধা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগে ফরমাল চার্জ আমরা দাখিল করেছি। অনারেবল ট্রাইব্যুনাল-২ আমাদের ফরমাল চার্জ, সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট বিবেচনা করে, আসামি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। আগামী ২৯ তারিখ প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট, যেহেতু তিনি আরেকটি মামলায় আটক আছেন, তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

মিজানুল বলেন, “হাসানুল হক ইনু ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এবং জাসদের সুপ্রিম। তিনি নিয়মিত শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন এবং তিনি ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে স্থানীয় এসপি এবং তার দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিতেন। শেখ হাসিনাকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সশস্ত্র ক্যাডারদেরকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠনে নির্দেশনা দিতেন।”

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ দাখিল করার কথাও উল্লেখ করে কৌঁসুলি মিজানুল বলেন, গত বুধবার ওই ফোনালাপ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দাখিল করা হয়েছিল; সেই ফোনালাপ ট্রাইব্যুনাল-২ এ দাখিল করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং ফোনালাপের ট্রান্সক্রিপ্টসহ।

মিজানুল জানান, ইনু ভারতের ‘মিরর নাউ’ নামক একটি অনলাইন পোর্টালে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, নিউজ ২৪ নামের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং আরও একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। “এছাড়া দেখামাত্র গুলির নির্দেশের যে অর্ডার দিয়েছেন, সেসব আনুষ্ঠানিক অভিযোগে রাখা হয়েছে।”

অভিযোগের মধ্যে আরও রয়েছে— ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নির্দেশনা দেওয়া; ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র নিরীহ জনতাকে চিহ্নিত করা; ছত্রীসেনা নামিয়ে বম্বিং করা ও গুলি করা; এসব নির্দেশনা স্থানীয় কুষ্টিয়ার এসপিকে অবহিত করা।

মিজানুল বলেন, “কথোপকথনে আরও বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ধরা হবে, তারপর স্ক্রলে নিউজে আসবে যে তাদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ছেড়ে দেওয়া হবে — মানে তাদের মেরে ফেলা হবে। এছাড়া ফোনালাপ থেকে উঠে এসেছে, জঙ্গি নাটকের কার্ডটা খেলতে হবে। আন্দোলনকারীদেরকে জঙ্গি বলা হবে, তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হবে। এটা প্রচার করা হবে যে জঙ্গি আক্রমণে তারা নিহত হয়েছেন। ৫ আগস্ট কারফিউ উঠে দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দুই হাজার লোক ঢাকায় জমায়েত করতে হবে। শিবিরের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে। বিএনপিকে ধ্বংস করে দিতে হবে।”

কৌঁসুলি মিজানুল আরও বলেন, কথোপকথনে দুজন নেতার নাম শোনা গেছে— জোনয়েদ সাকি ও সাইফুল হক— এবং তাদেরকে দলে কীভাবে নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশে যে ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া হয়, তার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন হাসানুল হক ইনু।”

ফেনালাপের বরাতে মিজানুল বলেন, “আপনি আপনার লোকাল লিডার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দেন কীভাবে আন্দোলন দমন করতে হবে। সাক্ষ্য প্রমাণ তদন্তে আসছে যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ স্থানীয় আন্দোলনকারীদের উপর বিভিন্ন স্থানে গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছে, যার নির্দেশ দেওয়ার সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।”

অভিযোগে মোট আটটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে; এর মধ্যে দুইটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ— একজনকে মাথায় গুলি করে হত্যা এবং ছয়জনকে গুলি করে হত্যা—উল্লেখযোগ্য।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *