দেশ রূপান্তর
শ্রাবণের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উড়ে বেড়াচ্ছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে পাহাড়ের কোলে। কখনো মেঘের ভেলায় ঢাকা পড়ে পাহাড় আবার কখনো পাহাড়ের চূড়াইয়ে হারিয়ে যায় মেঘের ভেলা। পাহাড় আর মেঘের মিতালি চোখে পড়ে নেত্রকোনার পাঁচগাঁও পাহাড়ে। সবুজে আচ্ছাদিত কলমাকান্দা উপজেলার ছোট্ট গ্রাম পাঁচগাঁও। ছোট-বড় পাহাড় আর ওপারে মেঘালয়ের পাহাড় দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটান পর্যটকরা। চন্দ্রডিঙ্গা, পাহাড়ি ঝরনা ছড়া এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। সারা বছর পর্যটক থাকলেও বর্ষায় সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে পর্যটকদের।
রয়েছে ভিন্ন চিত্রও। এখানকার ছোট-বড় সব পাহাড় পড়েছে একেবারে সীমান্তের শূন্যরেখায়। তার ওপর পাহাড়ি ঝরনা ছড়ায় গা ভেজাতে অনেক পর্যটকই ভুল করে চলে যাচ্ছেন ভারতের সীমান্তে। এমন দৃশ্যের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। পর্যটকরা ঝুঁকি জেনেও আরও বেশি সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছে। যদিও কয়েক মাস ধরে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে পর্যটকদের সচেতন করার চেষ্টা। কিন্তু তাতেও ফাঁকি দিচ্ছেন পর্যটকরা। সুযোগ-সুবিধা আর নিরাপত্তা সব দিক দিয়েই পিছিয়ে নেত্রকোনার সব কটি পর্যটন স্পট। পাঁচগাঁওয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চন্দ্রডিঙ্গা রিসোর্ট নামে একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, যদিও তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এক বছরের বেশি সময়। ফলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রায় সময়ই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তির মধ্যে।
সোমেশ্বরী নদী, পাতলাবন, মহাদেব নদ, লেংঙ্গড়া, গণেশ্বরী নদীসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে সীমান্তবর্তী দুই উপজেলায়। এর মধ্যে জেলার অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সাদামাটির পাহাড়। জিআই সনদপ্রাপ্ত স্থানটিকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পর্যটকরা। তবে যোগাযোগব্যবস্থা আর থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তা গড়ে ওঠেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘চন্দ্রডিঙ্গাসহ পাঁচগাঁওয়ের পাহাড় দেখতে প্রতিদিনই অনেক পর্যটক আসেন। আমরা স্থানীয়রা পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি, যেন তারা সবকিছু ঘুরে দেখতে পারেন এবং ভুল করে যেন ভারতীয় সীমান্তে চলে না যান। তবে পাঁচগাঁও এলাকায় যে ঝরনাগুলো পড়েছে, সবগুলোই একেবারে সীমান্তের শূন্যরেখায়। তাই অনেক পর্যটক ওইগুলো দেখতে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি চলে যান। আমরা তাদের সতর্ক করছি এবং সীমান্তে না যেতেও পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবু অনেকে চলে যান।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার পর থেকেই পর্যটনকে কীভাবে বিকশিত করা যায়, সে ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বিশেষ করে, আমাদের সীমান্তবর্তী দুটি উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে দুই উপজেলায় যতগুলো রেস্ট হাউজ হয়েছে, সবগুলো সংস্কার এবং পর্যটকদের বসবাসের উপযোগী করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর যে রেস্ট হাউজগুলো বন্ধ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত চালু করা হবে। তবে পাঁচগাঁও এলাকায় অনেক পর্যটক ভুল করে জিরো পয়েন্টে চলে যান। ইতিমধ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে একটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডসহ পর্যটকদের নিরাপত্তায় আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’