গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধের খবর কী

Google Alert – সামরিক

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার জন্য এক শান্তিচুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, যা দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ের অবসান ঘটাতে পারে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্রিটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার। জাতিসংঘের বৈঠক থেকে ফিরে কুপার বলেন, আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে বিশ্ব এই যুদ্ধ থামাতে চায়। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানান, একটি শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে। লিভারপুলে লেবার পার্টির সম্মেলনের আগে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুপার ইসরাইলকে গাজার ওপর নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ করে ‘অবিলম্বে পথ পরিবর্তনের’ আহ্বান জানান। তবে দলীয় চাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা আখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, এ ধরনের রায় দেওয়ার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে হবে।

তিনি স্বীকার করেন, ‘শব্দগুলো অনেক সময় ফাঁপা শোনায়,’ কিন্তু তার মতে মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের ‘চিৎকার ও যন্ত্রণা’ শেষ করা। অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যেসব মন্ত্রী চাপ দিয়েছিলেন, কুপার তাদের একজন। তবে তিনি বলেন, তার দায়িত্ব হচ্ছে মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরা নয়, বরং যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করা।

হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দিতে পারেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। তবে কুপার স্পষ্টভাবে বলেননি, ব্লেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি কি না। ব্লেয়ারের উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো এবং জামাতা জ্যারেড কুশনারের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার থাকলেও, ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে তার ভূমিকার কারণে তিনি এখনও বিতর্কিত।

কুপার বলেন, আমি মনে করি এক বিরাট ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘে শান্তি নিয়ে এক ধরনের দৃঢ় সংকল্প ও উদ্যম দেখা গেছে। তার মতে, প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তার প্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং সব বন্দিকে মুক্ত করা। তবে তিনি স্বীকার করেন, প্রক্রিয়াটি ভঙ্গুর এবং সামনে অনেক বাধা রয়েছে। আমরা ভান করতে পারি না যে বিষয়টি সহজ। এত দীর্ঘ সময় ধরে সংকট চলায় এটি আরও জটিল হয়েছে। কিন্তু সন্দেহ নেই, যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রকৃত উদ্যোগ এবং উদ্যম এখন আছে।

নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেওয়ার কয়েক দিন আগেই ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, দেখতে পাচ্ছি, গাজা নিয়ে একটা চুক্তি হতে যাচ্ছে। কুপারও স্বীকার করেন, ইসরাইলকে রাজি করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। হোয়াইট হাউসের ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা জাতিসংঘের প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। এতে গাজা থেকে ব্যাপকভাবে জনগণ উৎখাত না করা, হামাসকে বাইরে রাখা এবং পশ্চিম তীর সংযুক্ত না করার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের ভেতরে ব্লেয়ারের ভূমিকাকে ঘিরে অস্বস্তি রয়েছে। কুপার বলেন, টনি ব্লেয়ার এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাব দিয়েছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আরও অনেক প্রক্রিয়া চলেছে। এখনও অনেক কাজ বাকি।

মাসখানেক আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর কুপার প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে সাক্ষাৎ করেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে। তবে এখনও নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, এর কোনো সামরিক সমাধান নেই। গাজা সিটিতে নতুন হামলা চালিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাড়বে না। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করে আসছে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে কি না। তবে চলতি মাসের শুরুতে তারা জানিয়েছিল, এখনও সে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। কুপার বলেন, মানবিক সংকট বা যে শব্দই ব্যবহার করি, তা আসলে ফাঁপা শোনায়। মূল কথা হচ্ছে, একটি শিশুর আর্তচিৎকার, আর সেটিই বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ থামাতেই হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের হতাশার মূল কারণ হলো, সবাই ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখছে অথচ মনে হচ্ছে কিছুই করা হচ্ছে না, কিছুই বদলাচ্ছে না, সবকিছু কেবল খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো, আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সুযোগকে প্রকৃত শান্তি প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা।

রাশিয়া প্রসঙ্গে ইউরোপে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যে ‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’ দেওয়ার জন্য কুপার ভøাদিমির পুতিনকে অভিযুক্ত করেন। তিনি রুশ তেল ও গ্যাসের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। যদিও ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলো নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তবেই তিনি এমন ব্যবস্থা নেবেন। কুপারের ভাষায়, এ ব্যাপারে অনেক বেশি সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠকের আগে গাজা যুদ্ধের অবসানে একটি চুক্তির দাবিতে তেল আবিবে হাজারো ইসরাইলি বিক্ষোভ করেছে। শনিবার এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে সমবেত হয়ে একটি বড় ব্যানার প্রদর্শন করে। ব্যানারটিতে লিখা ছিল, সব বন্দিকে এখনই ঘরে ফিরিয়ে আনো। গাজায় বন্দি থাকা ওমরি মিরানের স্ত্রী লিশাই মিরান-লাভি বলেন, করার এবং সব বন্দি ও সৈনিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত চুক্তিই কেবল এই ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।’ তিনি ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ওপর আপনার প্রভাব খাটান। এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, ওমরি ও অন্যান্য বন্দিদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।’

নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। যদিও ট্রাম্প গাজা নিয়ে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি গাজা চুক্তি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটি একটি চুক্তি, যা বন্দিদের ফিরিয়ে আনবে ও যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।’

অন্যদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে কমপক্ষে ১০ জন এবং গাজা সিটিতে ১৫ জন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রয়েছে। খান ইউনিসে আড়াই মাস বয়সি ঈদ মাহমুদ আবু জাম্মা নামে এক শিশু অপুষ্টি এবং চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৬৬ হাজার ৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৬২ জন আহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরআর

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *