খাগড়াছড়ি-গুইমারা সহিংসতায় যা জানাল সেনাবাহিনী

চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সহিংসতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এই বিবৃতি প্রকাশ করে আইএসপিআর জানায়, গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর অঙ্গসংগঠনসমূহ সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে তিনজন নিহত ও বহু সাধারণ মানুষ আহত হয়।

গত বছরের এই ঘটনায় এক বছর পূর্তির লগ্নে, ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করে এবং অনুরূপ সহিংসতা পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ইউপিডিএফ-এর সন্দেহভাজন সদস্য শয়ন শীলকে পরদিন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

তবে শয়ন শীল গ্রেফতার হওয়ার পরও ইউপিডিএফ-এর অঙ্গসংগঠন পিসিপি’র নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে সেদিনই বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন ডাকে। পরদিন খাগড়াছড়িতে আধাবেলা হরতাল পালন করা হয়। অনলাইনে কিছু ব্লগার ও স্থানীয় দায়িত্বশীলরা বাঙালিদের উদ্দেশ্যে অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়।

২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ’র প্ররোচনায় এবং সামাজিক মাধ্যমে উস্কানির ফলে খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে এক পর্যায়ে ইউপিডিএফ কর্মীরা সেনাবাহিনীর উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, ফলে তিন সেনা সদস্য আহত হয়। সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য্য ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।

গতকাল ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠন আবারো বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, বাঙালিসহ সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়, রাস্তা অবরোধ ও নাশকতা চালায়। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় এই সংঘর্ষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধৈর্য্য ও কঠোর পরিশ্রম করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রোববার সকালে ইউপিডিএফ ও অঙ্গসংগঠন গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে উসকে তোলে। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তাদের সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল ও লাঠি নিয়ে সেনাদের ওপর হামলা চালায়।

এতে ৩ অফিসারসহ ১০ সেনা সদস্য আহত হয়। বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং সদস্যরাও আহত হন। রামসু বাজারের পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যরা অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সেনা ও সাধারণ মানুষের ওপর প্রায় ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সেনাবাহিনী দ্রুত তাদের ধাওয়া করলে সন্ত্রাসীরা এলাকা ত্যাগ করে। পরে ইউপিডিএফ এর দুষ্কৃতিকারীরা রামসু বাজার ও আশপাশে অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চালায়। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সেনাবাহিনী জানায়, ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা ভঙ্গ করার জন্য নারীদের ও স্কুলছাত্রীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করছে। বহিরাগত সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের পার্বত্য অঞ্চলে আনার চেষ্টা চলছে। রোববার বিকেলে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে অস্ত্র জব্দ করে। গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানায়। সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের অখন্ডতা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *