সহিংসতায় জড়াচ্ছে ইউপিডিএফ, সেনাবাহিনীর ওপর হামলা: অশান্ত খাগড়াছড়ির নেপথ্যে কী?

Google Alert – BD Army

খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারায় সহিংস পরিস্থিতির কারণে জেলাজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এই অস্থির পরিস্থিতিকে পাহাড়ি জনপদকে অস্থিতিশীল করার ‘সর্বশেষ অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন অনেকে। গতকাল, রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ১৪৪ ধারা বহাল থাকা সত্ত্বেও সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যাতে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং নারীসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ মানুষ, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যও রয়েছেন।

দুর্গাপূজা শুরু হলেও মণ্ডপে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ মাঠে রয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় এখনো ১৪৪ ধারা বহাল আছে।

গতকাল দুপুরে অবরোধ চলাকালে গুলিবর্ষণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হন। প্রায় ৩০ জন আহত হন, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর তিনজন অফিসারসহ ১০ জন সেনা সদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য এবং বিজিবি সদস্যও রয়েছেন। নিহত অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের লাশ গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে বাঙালিদের আনুমানিক ১০ থেকে ১২টি বসতবাড়িতে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার খাগড়াছড়ি সদরে সংঘর্ষের পর আলোচনা শেষে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলেও, গভীর রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলায় পুনরায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি উচ্ছৃঙ্খল জনতা ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ উসকানিতে টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল দল সড়ক অবরোধ সরানোর সময় ৫০ থেকে ৬০ জন পাহাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কিছুক্ষণ পর প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ পাহাড়ি সংঘবদ্ধ হয়ে আবারও সেনাবাহিনীর টহলদলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে গুইমারা জোনের টুআইসিসহ ১২ জন সেনা সদস্য আহত হন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে সেনাবাহিনী মাইকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে এবং পরে লাঠিচার্জ করে। উচ্ছৃঙ্খল জনতা মারমুখী হলে সেনা টহল দল ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। এ পর্যায়ে বাঙালি ও পাহাড়ি উভয়ের মধ্যেই সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়।

স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিবর্ষণ: আনুমানিক দুপুর সোয়া ১টায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের উঁচু অবস্থান থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে সংঘর্ষরত জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে দুজন পাহাড়ি নিহত হওয়ার খবর প্রাথমিকভাবে জানা যায়।

গতকাল সকালে রামগড় এলাকায় সড়ক অবরোধ সরানোর সময় বিজিবি টহল দলের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল পাহাড়ি জনতার সংঘর্ষ হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে বিজিবির একজন কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।

কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের (৪১ বিজিবি) অধীন কুকিমারাপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের চেকপোস্টে যাত্রীবাহী বাস তল্লাশি করে প্রায় ১০০টি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। বাসের ড্রাইভারের ভাষ্যমতে, চলমান ঘটনায় ব্যবহারের জন্য ইউপিডিএফ বান্দরবান থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে এই রামদাগুলো নিয়ে যাচ্ছিল।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক উপজাতি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই অস্থিরতার সূত্রপাত হয়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হলেও, ইউপিডিএফ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ সমর্থিত উপজাতি ছাত্র-জনতার ব্যানারে আধাবেলা হরতাল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধর্ষণবিরোধী মহাসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দুপুরে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে আক্রমণ করা হয় এবং চারজন সেনা সদস্য আহত হন।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের তাগাদা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *