পাহাড়ে সহিংসতা হলে সব সরকারের অস্বীকারের ধারা একই: আনু মুহাম্মদ

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

“>

বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, পাহাড়ে সহিংসতা হলে সব সরকারের অস্বীকারের ধারা একই—কখনোই তদন্ত হয় না, কারণ এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতারা জড়িত থাকে।

আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সহিংসতার কালক্রম: রামু বৌদ্ধমন্দির হামলা থেকে ১৩ বছর এবং গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের সহিংসতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

সরকারের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামুর ঘটনার সময় তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন এটি জামায়াত-বিএনপির একটি ষড়যন্ত্র, যেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের চেষ্টা ব্যাহত হয়। আজ যখন খাগড়াছড়ি জ্বলছে, বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এটি “মেড ইন ইন্ডিয়া”। এই অস্বীকারের ধারা একই—তারা কখনোই তদন্ত করে না, কারণ প্রায়শই এতে তাদের নিজেদের স্থানীয় নেতা জড়িত থাকে।’

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা কখনো স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং তা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে পরিকল্পিত হয়।’

২০১২ সালে রামু হামলার উদাহরণ দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাঙালি ও মুসলিমদের স্বার্থের নামে সংঘটিত সহিংসতা প্রকৃত অর্থে সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে উসকানি এবং ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে পরিচালিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছিল, কিন্তু এর মাত্র একটি অংশেই ন্যায়বিচার হয়েছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে আমরা পিছিয়ে গেছি।’

পার্বত্য অঞ্চলের ভূমির অধিকার বিষয়ে স্বচ্ছতা দাবি করে তিনি বলেন, ‘যদি সরকার সত্যিই পাহাড়ে শান্তি চায়, তাহলে জমি কার কাছে লিজে দেওয়া হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করুক।’

‘সহিংসতা বন্ধ করতে রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন, প্রশাসনিক আদেশ নয়। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধারা এমন দেশে চাননি, যেখানে মানুষ তার পরিচয়ের কারণে ভয়ে থাকে,’ যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

অনুষ্ঠানে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘রামু হামলার ১৩ বছর পরও বিচার শেষ হয়নি। ১৯টি মামলা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।’

তিনি জানান, রামুর ঘটনায় স্থানীয়রা ভিডিও প্রমাণ জমা দিয়েছিলেন, যেখানে দেখা যায় সেনা ও বিজিবি সদস্যদের পাশ কাটিয়ে হামলাকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছে।

এই আইনজীবী বলেন, ‘একটি কুরিয়ার পোস্টের ভিত্তিতে সহিংসতার ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে। একই প্যাটার্ন পরবর্তীতে কুমিল্লা, রংপুর, সাতক্ষীরা ও অন্যান্য এলাকায় দেখা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা শুধু সাধারণ মানুষের কাজ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা ও সদস্যরা সরবরাহ-সহায়তা দিয়ে চালিয়ে দেয়।’

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আইনি শাস্তি মানসিক ক্ষত সারাতে পারে না। যারা তাদের পরিচয়ের কারণে আক্রান্ত হয়, তারা সমাজের প্রতি বিশ্বাস হারায়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিনা লুৎফা বলেন, ‘রামুর ঘটনা থেকে দেখা যায়, সহিংসতার প্যাটার্ন একই—সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। একটি ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে মত-বৈচিত্র্যই ঘৃণার ভিত্তি হয়ে উঠছে। এটি নতুন ধরনের ফ্যাসিজমের দিকে ধাবিত করছে।’

‘বাংলাদেশে সহিংসতা বোঝার জন্য আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিশ্লেষণ প্রয়োজন,’ যোগ করেন তিনি।

আলোচনা সভায় কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশে কোনো সরকার গণতান্ত্রিকভাবে শাসন করেনি। চলমান সহিংসতা ধর্মীয় ফ্যাসিজমের উদাহরণ এবং বর্তমান শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় মনোযোগী, ন্যায্য মজুরি, কৃষকের দাম বা সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করেননি।’

রতন বলেন, ‘পরবর্তী সংগ্রাম হবে শ্রমিক, কৃষক, সংখ্যালঘু, দলিত ও সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকারদের এক রেইনবো কোয়ালিশন তৈরির, যাতে অর্জিত হয় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।’

গায়ক ও লেখক অরূপ রাহী বলেন, ‘রামু থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না থাকা, ডানপন্থি রাজনৈতিক মতাদর্শের মিশ্রণ, মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডার কারণে ঘটছে। 

‘সমাধান হলো পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি নয়, বরং “গভীর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র” গড়ে তোলা,’ বলেন তিনি।

আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ সুজিত চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *