ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জ এবার ‘অপবিত্র জোট’

Bangla Tribune

প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নিজস্ব কৌশলে পররাষ্ট্রনীতি ধরে রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে সখ্যতা বজায় রেখে চীন ও ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ গেছেন তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে কিছুটা ভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতির দৃশ্যপটে কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর আগ্রাসনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রাশিয়া, ইরান, চীন ও উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতার কারণে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।

২০ জানুয়ারি ওভাল অফিসের মসনদের বসেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে তার বাগাড়ম্বরে ছেয়ে গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। ক্ষমতায় এসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া, চীনকে প্রতিহত করা এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করার মতো বহুবিধ অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

তবে খেলার মোড় ঘুরে যায় রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির সঙ্গে। বিগত কয়েকবছরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেদের মধ্যে ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ গড়ে তুলেছেন। এর ফলে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে আর্থিকভাবে এখনও স্থিতিশীল থাকতে পারছে ক্রেমলিন।

ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরদিন পুতিন ও শির মধ্যে ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় তারা পারস্পরিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করার বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন। 
এছাড়া, গত জুনে উত্তর কোরিয়া এবং গেল শুক্রবার ইরানের সঙ্গেও কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া।

চীনে নিযুক্ত বাইডেন প্রশাসনের রাষ্ট্রদূত চার মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মৈত্রীকে ‘অপবিত্র জোট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চার শক্তি হাত মেলানোর ফলে তাদের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ কমে যেতে পারে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল রাসেল বলেছেন, ট্রাম্প হয়ত একটা উভয় সঙ্কটে পড়তে পারেন। একদিকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করতে চান, অন্যদিকে চীনকে বাণিজ্যিক চাপে রাখার খায়েশও তার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ওই দুদেশের মৈত্রীর কারণে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে মস্কোর আগ্রহ আর হোয়াইট হাউজের চাপে বেইজিংয়ের নতি স্বীকার- দুটো সম্ভাবনাই সীমিত হয়ে পড়ছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে রাশিয়া আর্থিকভাবে টিকে আছে মূলত চীনের কারণে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে রুশ তেল ক্রয় করে তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে চীন। 
এদিকে, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে সেনা প্রেরণ করেছে উত্তর কোরিয়া। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও দক্ষ হয়ে উঠবে কিম জং উনের সেনাবাহিনী। পাশাপাশি নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচির গতিও দ্রুত বৃদ্ধি করে চলেছে পিয়ংইয়ং।

এই চার দেশের জোটের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে অবগত আছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছিলেন, ইরানের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে তেল কিনছে চীন। ওই অর্থ দিয়ে মস্কোকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠাচ্ছে তেহরান। এসব অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ক্রেমলিন।

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তার এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর ‘বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন মস্কো, তেহরান ও পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে।  

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *