গাজা নিয়ে সৌদি আরবের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে চায় সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে।

এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো হামাসকে নিরস্ত্র ও প্রভাবহীন করা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তার মাধ্যমে পুনরায় শক্তিশালী করা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে। এই বাহিনীতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

দলিলটিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গাজায় শাসন ব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা প্রান্তিক করা হবে। সৌদি আরব মনে করে, হামাস শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং বিভাজনকে আরও গভীর করছে, তাই তাকে প্রান্তিক করা জরুরি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজটি হবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে, যা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে।

 পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধীরে ধীরে গাজায় প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে, যা হামাসের প্রভাব কমাবে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথাও উল্লেখ আছে, যাতে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।

পুরো উদ্যোগটি মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মানাল বিনতে হাসান রাদওয়ান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি আরব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার আনতে চায়—দুর্নীতি মোকাবিলা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে। দেশটি ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাও দেবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ করতে ফিলিস্তিনি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে হামাস এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের পর থেকে গাজায় কোনো উপস্থিতি বজায় রাখতে পারেনি।

এই গোপন প্রতিবেদনটি ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখের, যার আগের দিনই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এদিকে, অক্টোবরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করেন, যেখানে সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সহযোগিতা করে। যদিও চুক্তিতে হামাস নিরস্ত্র হবে বলে উল্লেখ ছিল, যা হামাস নেতারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে গাজা নিয়ে আরব দেশগুলোর মধ্যে অসন্তুষ্টিও রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর মিসরের শারম আল শেখে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে শীর্ষ বৈঠক ডাকা হলেও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান অনুপস্থিত ছিলেন। মিসর, সৌদি ও আমিরাতি সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আই-কে জানায়, চুক্তিতে প্রত্যাশিত প্রভাব ও ভূমিকা না পাওয়া নিয়ে অসন্তুষ্টিই ছিল তাদের অনুপস্থিতির কারণ।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বৃহস্পতিবার বলেছেন, সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি বলেন, যদি সৌদি আরব বলে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিনিময়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চাই, তাহলে না ধন্যবাদ, বন্ধুরা। তোমরা তোমাদের মরুভূমিতে উট নিয়ে ঘুরো, আমরা আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র আরও উন্নত করব।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *