ফ্যাসিবাদী শাসনামলের গুম-খুনের বিচার দাবি

RisingBD – Home

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গণহত্যা, গুম ও ভয়ের সংস্কৃতি, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচারের দাবি শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে বক্তারা গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলের সব গুম ও খুনের বিচার দাবি করেন।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মোজাফফর আহমেদ অডিটোরিয়ামে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

‘সকল প্রাণের নিরাপত্তা’ (সপ্রান) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে বিশিষ্ট দার্শনিক ও কবি ফরহাদ মজহার, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলি, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা, মা ও বোন, মানবাধিকার কর্মী ও নৃবিজ্ঞানী মুশফিকুর রহমান জোহান, গুম ও মানবাধিকার বিষয়ক গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী  ইসমত আরা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ সময় মানবাধিকার কর্মী ও নৃবিজ্ঞানী মুশফিকুর রহমান জোহান বলেন, “গুম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী গুমের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০। আমার ধারণা, এ সংখ্যাটা আরও বেশি। যারা ২-৩ দিন গুম ছিলেন, তারা নিজেদের গুম ভাবছেন না। অনেকেই এখনো প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না ভয়ে।”

শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যে গণহত্যা চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার, এ রকম গণহত্যা আমি আর দেখিনি। আমার ছেলেটার বুকে গুলি করা হয়েছে টার্গেট করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে একটু ভালো করে চিকিৎসাও করতে দেয়নি। আমাদের ছেলেদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। আর কোন ফ্যাসিবাদ যেন এ দেশে আসতে না পারে।”

ফারহান ফাইয়াজের বোন সাইমি ইসলাম ফারিন বলেন, “যাদের কারণে আমার বাবা মা তাদের ছেলেকে হারিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই। যেসব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কারণে এত শহীদ হয়েছে আমি চাই, তাদের যেন প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। এজন্য আমাদের সবার উচিত ঐক্যবদ্ধ থাকা।”

‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলি বলেন, “গুম-খুন আমাদের চোখেই সামনেই করা হচ্ছিল। কিন্তু পুরো দেশ চুপ ছিল। লেখক, সাংবাদিক যারাই কথা বলতেন, তাদেরই গুম করে ফেলা হত। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের জেলে দেওয়া হয়েছে আমাদের চোখের সামনেই। কিন্তু আমরা কিছুই বলতে পারিনি। শাপলা চত্বরে হেফাজতের গণহত্যায় কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তা কেউ জানে না। ইন্টারনেট, টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে এগুলো করা হয়েছে। জুরাইনে গণকবর দেওয়া হয়েছে।”

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “এই স্বৈরশাসকের পুরো সময়টায় গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ গণহত্যাটা থেমে থেমে হয়েছে। বিভিন্ন সময় যখন আন্দোলন দানা বেধে উঠছিল, তখন সন্দেহ হলেই নেওয়া হতো।”

গুমের পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “কাউকে রাতের অন্ধকারে উঠিয়ে নিয়ে ব্রিজে দুই পাশ বন্ধ করে গুলি করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কোন কোন লাশ নিয়ে গিয়ে ট্রেন লাইনের উপর রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে চলন্ত বাস বা ট্রাকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে রাতের অন্ধকারে।”

তিনি আরও বলেন, “১৫ সালে একজন নারী কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তাকে তার সন্তানসহ উঠিয়ে নেওয়া হয়। সন্তানকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয় কমলাপুরের কাছে। আর ভদ্র মহিলার এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান জানি না।”

কবি ফরহাদ মজহার বলেন, “যে পরিবারে একজন গুম হয়, সে পরিবারের লোকজন জানে না ওই ব্যক্তি বেঁচে আছে নাকি নেই। সেই পরিবারে ওই সময় যে অবস্থা সৃষ্টি হয়, তা ভয়াবহ। আমি নিজেও গুম হয়েছিলাম। আমি ফিরে এসে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। এটা সহ্য করা আসলেই কঠিন ছিল। এটা একটা ভয়ংকর অনুভূতি।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পরিবার কিন্তু জানে না গুম হওয়া ব্যক্তিকে কোথায় নিয়ে গেছে। সেটা সত্য না মিথ্যা তাও কিন্তু আমরা জানি না। এটা জানবার যে চেষ্টা, সেটা উপদেষ্টা সরকারের কাছ থেকে আমরা পাইনি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আমাদের ক্ষুব্ধ করে। সত্য জানার অধিকার আমাদের আছে। তারা কি মরে গেছে? কে তাদের নিয়ে গেছে, কেন নিয়ে গেছে, কী তাদের ভুল ছিল- এ সত্য জানার অধিকার জনগণের আছে।”

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *