দীঘিনালায় নানা কর্মসূচিতে ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

CHT NEWS

দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

“আত্মশক্তিই আসল শক্তি, বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে সংগঠিত হোন, প্রস্তুতি জোরদার
করুন” শ্লোগানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দীঘিনালায় ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
পালিত হয়েছে।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক
অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ
করেন মিল্টন চাকমা ও চন্দন চাকমা, শহীদ পরিবার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ককোলা
চাকমা, শহীদ মিটনের বোন শিভ্রা চাকমা ও সুচরিতা চাকমা, পার্টি পরিবার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক
অর্পণ করেন মল্লিকা চাকমা, নিয়তি চাকমা ও নন্টু চাকমা, গণসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক
অর্পণ করেন রিংকু চাকমা, দীনেল চাকমা, রিতা চাকমা ও মিতালি চাকমা। এরপর সর্বস্তরের
মানুষ শ্রদ্ধা জানান।


পরে ‘আমরা করবো জয়’ গানটি বাজিয়ে ইউপিডিএফের দলীয় পতাকার প্রতি স্যালুট
জানানো হয় এবং শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর সংক্ষিপ্ত সভায় ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমার
সভাপতিত্বে ও সজীব চাকমার সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ নেতা চন্দন চাকমা,
বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর দীঘিনালা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রিংকু
চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য দিনেল
চাকমা ও নারী সংঘ শাখার সভাপতি মিতালি চাকমা। সভায় পার্টির কেন্দ্রীয় বার্তা পড়ে শুনান
মিল্টন চাকমা।

সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে চন্দন চাকমা বলেন, পার্টি শুরু থেকে দীপ্ত শপথ
নিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, আগামীতেও চালিয়ে যাবে। পার্টি ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ
সংগ্রামের মাধ্যমে একদিন নিশ্চয় অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

তিনি আরো বলেন, যারা জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে তার একদিন ধ্বংস হয়ে
যাবে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে লিপ্ত মুক্তিকামী
জনতা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের মাধ্যমে তাদের শায়েস্তা করবে।

চন্দন চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের
পরস্থিতি পরিবর্তন হয়নি। পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। অন্যায় দমন-পীড়ন,
ভূমি বেদখলসহ নানা নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ও সন্তু বাহিনীকে ব্যবহার
করে ইউপিডিএফের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, সন্তু লারমার ভুলের কারণেই পাহাড়ের সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ
করছে, যা কখনো কল্যাণকর নয়। তিনি সবাইকেপূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সত্য
ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার আহ্বান জানান।

সভায় সভাপতি মিল্টন চাকমা আন্দোলনে অবিচল থাকতে উপস্থিত জনতাকে শপথনামা
পাঠ করান।

চা-চক্র

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ১২টার সময় “মৌনতা অপরাধ, নিষ্ক্রয়তা আত্মঘাতী,
প্রতিরোধেই মুক্তি” শ্লোগানে ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে নিয়ে এক আলোচনা সভা ও চা-চক্র অনুষ্ঠিত
হয়।

ইউপিডিএফ নেতা চন্দন চাকমার সভাপতিত্বে ও সজীব চাকমার সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত
ছিলেন ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সমম্বয়ক মিল্টন চাকমা ও সংগঠক প্রীতি চাকমা।

মিল্টন চাকমা বলেন, ২৬ ডিসেম্বর ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। যারা আজকে
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তারাই পাহাড়ের প্রকৃত রাজনৈতিক দলের ইতিহাস জানাবে।

তিনি আরো বলেন, ছাত্র-যুব সমাজ বর্তমানে অপসংস্কৃতি চর্চা ও নেশায় আসক্ত
হয়ে পড়ছে। তারুণ্যের শক্তি যদি এভাবে পড়ে থাকে তাহলে আমাদের আন্দোলন এগিয়ে যাবে না।
ছাত্র ও যুব সমাজ বিপথগামী হলে সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যার ফলে জাতির দুর্দিনে
তারা জনগণকে কোন উপকার করতে পারেন না।

তিনি ছাত্র ও যুব সমাজকে অনলাইন জুয়া, ভিডিও গেম না খেলার আহ্বান জানিয়ে
বলেন, ছাত্র-যুব সমাজকে জাতির কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অস্তিত্ব রক্ষার
আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে। ৫ আগস্ট যেভাবে ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে
পতন ঘটিয়েছে, একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব সমাজকেও গর্জে উঠতে হবে। ৫ আগস্টের
পরে পাহাড়ের ছাত্র সমাজ যেভাবে রাজপথে নেমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ ‘এগত্তর’
এর দাবি তুলেছিল তাতে আমি নিজেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রদের সেই আন্দোলনকে
শাসকগোষ্ঠি ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ভয় পেয়েছিল। যার কারণে নানা ট্যাগ লাগিযে ও হুমকি-ধমকি
দিয়ে তাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

প্রীতি চাকমা বলেন, যুবকরাই পারে দুনিয়াকে বদলাতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অগ্রণী
ছাত্র যুবকরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের সঠিক লাইনে থাকে তাহলে একদিন অধিকার প্রতিষ্ঠা
হবে।

তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠীর সাথে আঁতাত করে সুবিধাবাদী-দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলরা
পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত উস্কে দিচ্ছে।

তাকে গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় মুখোশ
ও সেনাবাহিনী মিলে বানছড়া এলাকা থেকে রাত ৩টা সময়ে আমাদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা
হয়। সে সময় সেনাবাহিনীর চাইতে মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বেশি নির্যাতন চালিয়েছে। অথচ
তারাও পাহাড়ি ভাই। অর্থ লোভে পড়ে  তারা সত্য
ও ন্যায় পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে
সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

সভার সভাপতি চন্দন চাকমা বলেন, আমাদের প্রগতিশীলতা দিয়েই প্রতিক্রিয়াশীল
শক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের সত্য ও ন্যায়কে চিনতে হবে।

তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতা, বাধা অতিক্রম করে যুবকরাই বিজয়ের হাসি ফোটাতে
পারেন। আমাদের ছাত্র-যুবকদেরই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে
অবশ্যই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলনে সামিল হতে হবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *