বাঘাইছড়িতে শিশু র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচিতে ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

CHT NEWS

ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাজেকে শিশু র‌্যালির আয়োজন করা হয়। 


বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে শিশু র‌্যালি, অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের উদ্দেশ্য
পুস্পস্তবক অর্পণ, দলীয় পতাকা উত্তোলনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফের ২৬তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের
বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিশাখা চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি পলেন চাকমার নেতৃত্বে সাজেকের উজোবাজারে ইউপিডিএফ’র কার্যালয়ে
চৌকস টিমের মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পতাকায় স্যালুট প্রদান ও শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হয়। এতে বিভিন্ন স্কুল ও এলাকার শিশু-কিশোর ও ছাত্র-ছাত্রীরা
অংশগ্রহণ করেন।

ইউপিডিএফের দলীয় পতাকা উত্তোলন করছেন চৌকস টিমের সদস্যরা।


এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় আয়োজন করা হয় অগ্রসর শিশু কিশোর কেন্দ্রের উদ্যোগে
এক বর্ণাঢ্য শিশু র‌্যালি।

‍“ভয়ভীতি মুক্ত পরিবেশে যোগ্য নাগরিক
হয়ে ওঠার চাই সুযোগ ও অধিকার” এই শ্লোগানে আয়োজিত তিন শতাধিক শিশু, কিশোর-কিশোরীর অংশগ্রহণে
শিশু র‌্যালিটি লাদুমনি বাজারের দ্বপদা হতে শুরু হয়ে সাজেক পর্যটন সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার
প্রদক্ষিণ করে উজো বাজারের গঙ্গারামমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে দালাল-ভূমিদস্যুদের
কুশপুত্তলিকায় লাঠিপেটা ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের হাতে ছিল ইউপিডিএফের পতাকা
ও ‍‍‍“প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক, Long Live UPDF; No Full Autonomy No Rest; আমরা
বাঙালি নয়” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা ফেস্টুন।

সমাবেশে কলেজ শিক্ষার্থী সুফা চাকমার সঞ্চালনায় লিখিতভাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
রাখেন এবং ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমি চাকমা শিক্ষার্থীদের শপথনামা পাঠ করান।

অগ্রসর শিশু কিশোর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জয়সা চাকমা বলেন,
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর আজ শুভ জন্মদিন। জনগণের একমাত্র মুক্তির
সনদ পুর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি সামনে রেখে ১৯৯৮ সালে এই দিনে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠা লাভ
করে। আমরা আজকের এই বিশেষ দিনে র‌্যালিতে সমবেত হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতিগত অধিকার নেই। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা
বলার অধিকার নেই। আমাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি সেটেলার কর্তৃক কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের
বাপ-ভাইদের ধরে ধরে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা
মানসম্মত শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। সন্তু
লারমা’র নেতৃত্বাধীন জেএসএসসহ সেনা-সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী দিয়ে সরকার আমাদের মধ্যে
জাতিগত সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে জুম্মো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র লড়াকু সংগঠন ইউপিডিএফের
পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

জয়সা চাকমা বলেন, আমরা ভয়ভীতি মুক্ত পরিবেশে যোগ্য হয়ে এদেশে বসবাস করতে
চাই। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের সেই সুযোগ না দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের
এই ষড়যন্ত্র চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। তাই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে
এবং দালাল প্রতিক্রিয়াশীলদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।


এরপর আগামী দিনে দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল ও ভূমিদস্যুদের প্রতিহত করতে সংগঠিত
হয়ে আন্দোলনে এগিয়ে আসার সংকল্পে উপস্থিত শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শপথনামা পাঠ করান ৯ম
শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি চাকমা।

শেষে দালাল ও ভূমিদস্যু সেটলারদের কশপুত্তলিকায় লাঠিপেটা করে তাদের অপকর্মের
প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানানোর মধ্য দিয়ে র‌্যালি ও সমাবেশ কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।

অপরদিকে, উপজেলার বঙ্গলতলিতে সকাল ৭:৩০টার সময় ইউপিডিএফ সংগঠক ইয়ান চাকমার
সঞ্চালনায় সমবেত পার্টি কর্মী, কর্মী পরিবার-সন্তান, গণসংগঠন ও এলাকার মুরুব্বিদের
উপস্হিতিতে গণতান্ত্রিক যুব ফেরামের নেতা শুক্র চাকমার নেতৃত্বে চৌকস টিমের মাধ্যমে
ইউপিডিএফের দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পতাকায় স্যালুট প্রদান করা হয় এবং অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে
পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের
সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বঙ্গলতলিতে আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ পতাকায় স্যালুট প্রদান করা হচ্ছে। 

এরপর সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য প্রদান ও কেন্দ্রীয় বার্তা পড়ে শোনান ইউপিডিএফের
বাঘাইছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অক্ষয় চাকমা।

পার্টি প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর বছরপূর্তি উদযাপনের দিনে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অক্ষয় চাকমা বলেন, দীর্ঘ এই ২৬ বছর অতিক্রম করা পার্টির
জন্য মোটেই সহজ ছিল না। জনগণের ঐকান্তিক সহযোগীতায় নানা ঘাত-প্রতিঘাত, নানা ষড়যন্ত্র,
অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন, খুন-গুম মোকাবেলা করে পার্টি আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। আগামীতেও
পার্টি ও জনগণের মধ্যে আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে জুম্ম জনগণের মুক্তির সনদ
পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার করতে হবে। তিনি রাষ্ট্রীয় সকল ষড়যন্ত্রের
বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

পরে উপস্থিত লোকজনের জন্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক প্রীতিভোজের আয়োজন
করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *