সীমান্তের কাঁটাতারে আর কোনো ফেলানীর লাশ

Bangla News

চট্টগ্রাম: সীমান্তে রক্ত ঝরছে। আমরা এটা চাই না।

আমরা ভারতে কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। কিন্তু বন্ধুত্ব চাই সমতার ভিত্তিতে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
আমরা সীমান্তের কাঁটাতারে আর কোনো ফেলানীর লাশ দেখতে চাই না। আপনারা জানেন গত পরশু কুমিল্লায় সীমান্তে রক্ত ঝরেছে। আমরা কোনোভাবেই এটা চাই না।  

কয়েকদিন আগে ভারতের জেলেদের আমরাও মুক্তি দিয়েছি, ভারতও মুক্তি দিয়েছি। সৎ প্রতিবেশী হয়ে উঠতে সমস্যা কোথায়? ভারত আমাদের মেডিক্যাল ভিসা, পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের কী সুবিধা হচ্ছে তাতে? কোনোভাবেই সুবিধা হবে না। সেখানেও প্রতিবাদ হচ্ছে। যদি পেঁয়াজ রপ্তানি না হলে মহারাষ্ট্রের লোকেরা আন্দোলন করে। আমাদের দেশে গরু আসত, এখন গরু আসে না। আমরা গরুর ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়েছি। আলু, পেঁয়াজেও আমরা স্বনির্ভর হবো। চিকিৎসাসেবায়ও আমরা স্বনির্ভর হবো। আমাদের বিশ্বমানের চিকিৎসক আছে। সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর।  


শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গন ক্বণনের ৩৯ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ এসব কথা বলেন।  


তিনি বলেন, দেশের ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব প্রাণ দিয়ে সফল করেছে। অনেকে বিপ্লব বলতে চায় না কনভেনশনাল ওয়েতে। আমি বলি, সংজ্ঞা চেঞ্জ করতে হবে। আগের মতো রুশ বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, চীন বিপ্লব হবে না। কারণ রাজনীতির কেমিস্ট্রি চেঞ্জ হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি লাখ লাখ মানুষ দেখেছি কীভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে ৫ আগস্ট। জীবন বাজি রেখে মা, শিশু, বৃদ্ধ নেমে এসেছে। জানে যে সামনে মৃত্যু। তারপরও তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। ১৬ বছরের জগদ্দল অপশাসনের দুঃশাসনের যে কালো ছায়া। দুঃশাসনের যে কালো ছায়া। সম্পদ লুটে নিয়ে গেছে।  গুম, খুন, হত্যা, রাহাজানি, হত্যা, ধর্ষণের সেঞ্চুরি বীভৎস দেশ পেয়েছি। সেই ভগ্নস্তূপের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বলবো মিডিয়া কর্মীদের সচেতন থাকতে। আমাদের দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পাশের দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পাশের দেশে মিডিয়া সেখানে অতিরঞ্জন করে ছোট্ট ঘটনাকে বড় করে দেখাচ্ছে।  


সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে আগে স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একজন পলাতক, একজন জেলে বন্দি আছেন। ছাত্ররা যেদিন সুপ্রিম কোর্ট অবরোধ করেছিল সেই দিন ১১ জন সমন্বয়ক এসেছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবে। তারা একটি স্মারকলিপি দেন, যেসব সাংবাদিক স্বৈরাচারের দোসর ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তার পরদিন বাধ্য হয়ে নতুন কমিটি গঠন করি। সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে, আরও চলবে। মিডিয়া এখনো দোসরমুক্ত হয়নি, ষড়যন্ত্রমুক্ত হয়নি।  


চট্টগ্রামের অনেক দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলাম চট্টগ্রাম থেকে। তার আগে ব্রিটিশ আমলে স্বদেশী আন্দোলনের পুরোধা বীর সূর্য সেনের জন্মস্থান চট্টগ্রাম। আবেগতাড়িত জায়গা চট্টগ্রাম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্য সেন হলের ছাত্র ছিলাম সেই জন্য গর্ব বোধ করি। চট্টগ্রামের কাছে আমার ব্যক্তিগত ঋণ। এখন যিনি দেশ চালাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উনার ছোটভাই বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আমার দীক্ষা গুরু। উনার হাত ধরেই আমি দৈনিক বাংলায় ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার হিসেবে যোগ দান করি। ১৯৭৭ সালে ড. ইউনূসের পৈতৃক নিবাস পাঁচলাইশের ‘নিরিবিলি’ নামের বাসায় এসেছিলাম। উনি যখন নোবেল পুরস্কার পান তখন জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশাল প্যান্ডেল করে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। ড. ইউনূস ক্ষমতায় যাওয়ার পর উনার সঙ্গে আমার দুইবার দেখা হয়েছে। উনাকে সব বলেছি।  


চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রাম আন্দোলনের, স্বাধীনতার সূতিকাগার। শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা উদ্বোধন হলো আজ। উন্নয়নে একধাপ এগোলো চট্টগ্রাম, যানজট থেকে মুক্তি পাবে। চট্টগ্রাম শহর এমনিতে ছিমছাম সুন্দর, ঢাকা থেকেও সুন্দর। সিলেট ছাড়া পাবে না এত সুন্দর শহর। পার্বত্য চট্টগ্রাম আরও সুন্দর। চট্টগ্রামে অনেক অনগ্রসরতা আছে। নানা ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছে না। এটা আমাদের মূলধারার লোকদেরই ব্যর্থতা। চট্টগ্রামবাসীকে এর জন্য দায়ী করবো না। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো এটাই চাই।  


তিনি ৩৯ বছর ধরে আবৃত্তি সংগঠন পরিচালনার জন্য মোসতাক খন্দকারকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।  


কবি হাসান হাফিজ তাঁর প্রকাশিতব্য ‘জুলাই বিপ্লব’ বইয়ের ‘মুগ্ধ জেগে আছি’ ও বহু ভাষায় অনূদিত ‘টেরাকোটা’ কবিতাটি পড়ে শোনান।    

   

ক্বণন সভাপতি মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল, কলকাতার আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক্ষক শাশ্বতী গুহ এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি।  অতিথিদের হাতে বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ক্বণন সভাপতি মোসতাক খন্দকার।  


জাহিদুল করিম কচি বলেন, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আবৃত্তিশিল্পী মোসতাক খন্দকারের উদ্যোগ ক্বণনের শিল্পযাত্রা শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রাম দ্বিতীয় রাজধানী। এ নগরে থেকেও মোসতাক খন্দকার এগিয়ে গেছেন। তিনি সবার কাছে সমাদৃত। তিনি ৭৬টি কর্মশালা করে ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে আবৃত্তি শিখিয়েছেন। তিনি ঢাকায় থাকলে এত দিনে জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যেতেন।  


সঞ্চালনায় ছিলেন শরীফ মাহমুদ ও শুভ্রা চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তব্য দেন ক্বণনের কার্যকরী পরিষদের সদস্য সৌভিক চৌধুরী।  


অনুষ্ঠানে ক্বণনের শিশুকিশোর সদস্যদের পরিবেশনায় মোসতাক খন্দকারের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ‘বাংলাদেশের মুক্তি’ শীর্ষক বৃন্দ আবৃত্তির মঞ্চায়ন হয়। এতে অংশ নিয়েছে মেহজাবিন, সামিহা, নাবিলা, নওশিন, সমৃদ্ধ, মুবাশশিরা, রেনেসাঁ, আফরিন, জারিফ ও নুসাইবা। একক আবৃত্তি করেন সৌভিক চৌধুরী, শরীফ মাহমুদ, শুভ্রা চক্রবর্তী, সুস্মিতা চৌধুরী, ইব্রাহিম মাহমুদ, মুনয়িম আসরা ও রাইয়ান রহমান। একক ও দ্বৈত আবৃত্তি করেন কলকাতার আবৃত্তিশিল্পী শাশ্বতী গুহ ও ক্বণন সভাপতি মোসতাক খন্দকার। সংগীত পরিবেশন করেন শ্রাবন্তী ধর ও কৌশিক দত্ত।  


বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৫

এআর/পিডি/টিসি

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *