Google Alert – প্রধান উপদেষ্টা
দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুল আলোচিত। এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কীভাবে বাধাগ্রস্ত হবে, তাও বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিভিল সার্জন সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্যহীন অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, এজন্য একে অপরের ওপর দোষ চাপালে হবে না। এর প্রতিকার করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তনের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সিভিল সার্জনদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের যতটুকু চিকিৎসা সরঞ্জাম বা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, এ পরিস্থিতির মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তনের জন্য নিজের মন ঠিক করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ২৫ শতাংশ উন্নতি হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়কে গুহাবাসীর মানসিকতার সময়ের সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সেই গুহার মানসিকতা দিয়ে তো এ পৃথিবী চলবে না। গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; এখানে দুর্নীতি কমাতে হবে।
সম্মেলনে সরকারের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা চেয়েছেন সিভিল সার্জনরা। তাদের মতে, অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি, ভুয়া চিকিৎসক, দালালচক্র ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে তাদের সীমিত আকারে এ ক্ষমতা দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তায় আনসার বা ‘স্বাস্থ্য পুলিশ’ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা। এ ছাড়া আরও কিছু দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের এসব দাবি কতটা যৌক্তিক, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। উদাহরণ হিসাবে ২০২১ সালে প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়। তখন করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সুশাসনে ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলেছিল, এ কার্যক্রমে রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা, লকডাউন, টিকা ক্রয় ও বিতরণে স্বচ্ছতা, সুশাসন-এসব ক্ষেত্রে সমন্বয়ে ত্রুটি ছিল। তখন এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণায় উঠে আসা তথ্য উপস্থাপন শেষে ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরেছিল টিআইবি।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে (বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট) শিশুদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট’ (এইচডিইউ) স্থাপন করার কথা ছিল। যন্ত্রপাতির অভাবে প্রকল্পটি চালু করা যায়নি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে সরে যায়। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরপরই প্রকল্পটি মাঝপথে সমাপ্ত ঘোষণা করে সরকার। সরকারের উচিত নিজেদের অর্থে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়ে দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বত্রই চলেছে দুর্নীতির মহোৎসব। তখন স্বাস্থ্য খাত ঘিরে গড়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। যেহেতু এখন অবস্থা পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে, সেহেতু স্বাস্থ্য খাতসহ সব খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।