জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ‘আমরা ফেনীবাসীর’ ১১ দফা দাবি

Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম

একেএম আবদুর রহীম : ২০২৪ সালের আগস্টে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছিল ফেনী জেলায়। এই দুর্যোগে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল এবং অর্ধশতাধিক জনের মৃত্যু ঘটে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকায়। ফেনীকে বলা হয় “বাংলাদেশের চিকেন নেক” ভৌগোলিকভাবে সংবেদনশীল এই অঞ্চল ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত আলোচনায় উঠে এসেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এই অঞ্চলের উপর হুমকি, বিগত সময়ের ভারত কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া সর্বগ্রাসী বন্যা এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি ও পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বড় বিপদের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ফেনীর বন্যা এবং ফেনীর কৌশলগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে কিছু জরুরি দাবি উত্থাপন করেছে ‘আমরা ফেনীবাসী’ প্ল্যাটফর্ম।

১. টেকসই বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে : শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে ফেনী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মানুষকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে হবে। দ্রুত বল্লামুখা বাঁধ, মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণ সহ সকল প্রতিরক্ষা অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য যেসব খাল অবৈধভাবে দখল হয়ে বন্ধ হয়ে আছে, সেগুলো উদ্ধার করে পুনঃপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষায় স্বাভাবিকভাবে পানি যেসব এলাকা দিয়ে নামে, সেসব এলাকার পানি ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করতে হবে।

২. নদী রক্ষা : ফেনী নদীতে পানির ধারণক্ষমতা কমে এসেছে। তাই নদীটিকে পরিকল্পিত এবং পরিবেশ সম্মতভাবে ড্রেজিং করতে হবে। নদীর পাড়ে ভাঙন এখনো অব্যাহত এ অবস্থায় টেকসই পাড় রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। কৃষি ও জীবনমানের স্বার্থে ফেনী নদীর পানি রক্ষায় প্রতিবেশী দেশের সাথে করা চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং অবিলম্বে চুক্তির অতিরিক্ত পানি নেয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সোনাগাজীতে মুহুরী প্রজেক্ট এবং আধুনিক স্লুইস গেট পুনঃনির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

৩. বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা : কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদে ক্ষতি ৩৯৬ কোটি টাকা। ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক যোগাযোগ ও মোটরযান খাতে ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ। এ অবস্থায় কৃষকদের জন্য প্রণোদনা, বিনা সুদে ঋণ, পুনরুদ্ধার সহায়তা এবং আধুনিক চাষাবাদে প্রযুক্তি সহায়তা দিতে হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

৪. একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি : নানাবিধ কারণে বহুবছর ধরে ফেনী জেলা অবহেলিত। ফেনীর মেয়েরা ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক কারণে অধিকাংশই নিজ জেলার বাইরে যেতে চায় না। ছেলেরা অনেকেই উচ্চশিক্ষার অভাবে লেবার ভিসায় বিদেশে চলে যায়। এতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি না হওয়ায় ফেনী কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগানোর মত যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না। গতানুগতিক ধারার পরিবর্তে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে যুগের চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাবনাময় জেলা ফেনীতে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

৫. একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে ।

৬. আন্তর্জাতিকমানের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।

প্রবাসী অধ্যুষিত এই জেলায় আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার, ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট ও নার্সিং কলেজ স্থাপন করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।

৭. সেনানিবাস ও জাতীয় নিরাপত্তা

ফেনী বাংলাদেশের ‘চিকেন নেক’। এই অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে সংবেদনশীল এবং সামরিক দিক থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে ফেনীতে একটি সেনানিবাস বা অন্তত একটি সেনা ব্রিগেড স্থাপন সময়ের দাবি এবং মিরসরাইয়ে ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করতে হবে।

৮. ফেনী বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হোক :

৯. ফেনী শহরের যানজট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন :

১০. অপরিকল্পিত নগরায়ন ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ এবং কৃষি:

১১. সামাজিক অপরাধ দমন ও নিরাপদ সমাজব্যবস্থা :

কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ দমনে সামাজিক আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি জোরদার করতে হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *