বনবিলাসী বিপন্ন পাখি ধনেশ

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

জীববৈচিত্র্যে একটি অনন্য সংযোজন হলো কালো ধনেশ। এটি ধনেশ প্রজাতির মধ্যে এক অসাধারণ সদস্য। এর আকার, আকৃতি, সৌন্দর্য ও স্বভাব অন্য সব পাখি থেকে আলাদা। কালো ধনেশের শরীরজুড়ে ঘন কালো পালক রয়েছে। তখন ধনেশকে রহস্যময় বলে মনে হয়। এর লেজের ডগায় সাদা দাগ এবং মাথার উপরিভাগে বড় এক বাঁকা ঠোঁট ও ক্যাস্ক রয়েছে। ঠোঁটের ওপরের বাড়তি অংশকে অনেকটা হেলমেটের মতো দেখতে। এ ঠোঁট শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়; এটি খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা এবং জোরালো শব্দের জন্য ব্যবহৃত হয়।

এ পাখি সাধারণত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল ও সিলেটের বনাঞ্চলে দেখা যায়। তাদের মূলত দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট ছোট দলে। বনভূমির উঁচু গাছেই তারা বাসা বাঁধে। ফলমূল, বিশেষ করে বট, অশ্বত্থ, পাকুড় ইত্যাদি গাছের ফল খেয়ে তারা জীবন ধারণ করে। মাঝেমধ্যে তারা ছোট পোকামাকড় বা সরীসৃপও খেয়ে থাকে। কালো ধনেশের আরেকটি মুগ্ধকর বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রজনন আচরণ। ডিম পাড়ার সময় স্ত্রী পাখি গাছের কোনো কোঠরে ঢুকে সেটি কাদা ও মল দিয়ে বন্ধ করে দেয়। আর একটি সরু ফাঁক রেখে দেয় যেখান দিয়ে পুরুষ পাখি খাদ্য এনে দেয়। পুরো প্রজননকাল স্ত্রী পাখি ও বাচ্চাগুলোর দেখভাল করে পুরুষ ধনেশ। এমন নিবেদিত আচরণ প্রকৃতির এক দুর্লভ দৃষ্টান্ত।

তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বন উজাড়, খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে আজ এ দুর্লভ পাখিটি বিপন্নের তালিকায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN) একে ‘Near Threatened’ বা ‘সংকটাপন্নের কাছাকাছি’ শ্রেণিতে রেখেছে। বাংলাদেশে পাখিপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে এই পাখি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, যা আশার আলো জাগায়। বন সংরক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে কালো ধনেশের আবাসস্থল রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।

শেষ কথা, কালো ধনেশ শুধু একটি পাখি নয়, এটি আমাদের প্রকৃতির এক জীবন্ত ঐতিহ্য। তাকে রক্ষা করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলার বন ও জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখা।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *