এক অবিস্মরণীয় নেতা ও বলিষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক

Google Alert – সামরিক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ইতিহাসে শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমান একটি উজ্জ্বল নাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক ও রাজনৈতিক দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও অগ্রগতিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটি ছিল একটি দেশের গতিপথ পরিবর্তনের অপচেষ্টা, যা জাতির হৃদয়ে আজও গভীর শোক ও ক্ষোভের স্মৃতি হয়ে রয়েছে।

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে অসামান্য সাহসিকতা ও নেতৃত্ব প্রদর্শন করেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে বর্বর সামরিক অভিযান চালিয়ে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা শুরু করে। ৮ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা চট্টগ্রামে অবস্থান করছিল। এই পরিস্থিতিতে মেজর জিয়াউর রহমান তাঁর পাকিস্তানি অধিনায়কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কওে এবং বন্দি করেন।

২৬ মার্চ বিকেলে তিনি তাঁর ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের একত্রিত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করার শপথ করান এবং ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি”’….এই ঘোষণার মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে যান। এই ঘোষণাই যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দৃঢ় করতে এবং দেশবাসীর হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের নতুন গতি তৈরি করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে জিয়াউর রহমান জাতীয় পুনর্গঠনে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে তিনি রাষ্টপতি হিসেবে অভিষিক্ত হন। তাঁর শাসনামলে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে।  

রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় এবং জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। কৃষি ও শিল্পে ব্যাপক সংস্কার আনেন, বাজারমুখী অর্থনীতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করেন, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁর নীতির ফলে কৃষি ও শিল্পখাত শক্তিশালী হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।

অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ‘আত্মনির্ভর বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন দেখান। তিনি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের শাসনব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করে। তাঁর শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠিত হয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যা আজও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইসলামি মূল্যবোধ, এবং উৎপাদনমুখী উন্নয়নভিত্তিক অর্থনীতির মতো জিয়াউর রহমানরহমানের রাজনৈতিক দর্শন তথা জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর নীতি ও আদর্শ আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিম-লে আলোচিত ও বিশ্লেষিত হয়।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে অবস্থানকালীন সময়ে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে তিনি নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়ে শাহাদতত বরণ করেন, যা জাতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তবুও, তার আদর্শ ও দর্শন আজও বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করছে।

আজ এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই রাষ্টনায়ককে, যিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেন না, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক ধারা এবং উন্নয়ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিলেন।আজকের এই মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাঁর আদর্শ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি উন্নতও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিই।

শ্রদ্ধাঞ্জলি শহীদ জিয়াউর রহমান আপনি ছিলেন, আপনি আছেন, আপনি থাকবেন বাংলাদেশ এর হৃদয়ে। আপনার সাহস, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেম চিরকাল জাতির প্রেরণা হয়ে থাকবে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, চট্টগ্রাম মহানগর।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *