Photos from Hill Voice's post

Hill Voice on Facebook

অপহরণকারীরা কল্পনা চাকমার প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল: আলোচনা সভায় সোহরাব হোসেন

হিল ভয়েস, ১৮ জুন ২০২৫, ঢাকা: আজ ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় ”কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর: অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা।

উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন লেখক ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আসলাম খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং বিভাগের পরিচালক জনা গোস্বামী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জানকি চিসিম।

উক্ত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা এবং কল্পনা চাকমাকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের সিনিয়র সদস্য সুর্মী চাকমা।

সাংবাদিক ও লেখক সোহরাব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালি আধিপত্যবাদ অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আদিবাসীদের সাথে এই রাষ্ট্র যেভাবে আচরণ করেছে সেটা কখনোই কাম্য নয়। এই উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুথানের পর আশঙ্কা ছিল সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করবে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেনি। কিন্তু পাহাড়ে যে এত বছর ধরে সেনাশাসন চলমান, কল্পনা চাকমা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারা জীবন ধরে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই তাকে অপহরণ করে তার কন্ঠস্বরকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। এই সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সকলকে এক থাকতে হবে। বাঙালিরা আপনাদেরকে বিভাজন করতে চাচ্ছে। আপনারা ভুলেও বিভাজিত হবেন না। পার্বত্য চট্টগ্রাম তো ভিন্ন দেশ নয়, তাহলে সেখানে চেকপোস্টগুলোতে পরিচয় দিতে হবে কেন? বিদেশীরা সেখানে গেলে তাদেরকে কেন বিশেষ নজরে রাখতে হবে?

তিনি আরও বলেন, এখন নির্বাচনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে, কিন্তু কোনো জাতীয় দলই সেখানকার মানুষের অধিকারের কথা ভাবছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন জেএসএস কেন তাদের নির্ধারিত প্রতীক পাবে না? কেননা, এই দলের পিছনে জনগণের যে সমর্থন রয়েছে, তা রেজিস্টারকৃত অনেক দলের তুলনায় অনেক বেশি। আজ পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠীরা ভাগ কর, শাসন কর নীতি চালু রেখেছে। আপনাদেরকে অনুরোধ করব, সকল প্রকার বিভেদ ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে ঐক্য গঠন করে কল্পনা চাকমা, সন্তু লারমা এবং এম এন লারমার স্বপ্ন পূরণে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তার বক্তব্যের পরে তিনি কল্পনা চাকমাকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা পাঠ করে শুনান।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আসলাম খান তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৩ সালে নানিয়াচরে বিরাট হত্যাকান্ড হলো। আমরা তখন ছাত্র নেতা। তখন আমরা গিয়েছিলাম নানিয়াচর, লংগদু, দীঘিনালায়। আমি মঞ্চে বসে ছিলাম। তখন প্রচন্ড রোদে অনেকের পিঠ পুড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের চোখের পাতা নড়েই না। সেখানে একটা মেয়ের সাথে ২ ঘন্টা আলোচনা হয়েছিলো। তার নাম কল্পনা চাকমা। পরে শুনলাম তাকে নাকি অপহরণ করা হয়েছে। আজকে আমাদের দেশে যে পরিস্থিতি যেখানে আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে রাষ্ট্র স্বীকার করতে চায় না। বাংলাদেশ আদিবাসীদের যে এত বৈচিত্রতা সেটা এই রাষ্ট্র মানতে চায় না। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন চায় না। কারণ শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাচেতনায় পাহাড় নেই, তাদের মনে বাগদা ফার্ম নেই। তাদের মধ্যে আছে শুধু বাটপারি। এই রাষ্ট্র আদিবাসীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বারবার। এখান থেকে মুক্তি পেতে তারা যদি অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তাহলে রাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী বানিয়ে আদিবাসীদের শোষণের বৈধতা তৈরি করবে। দেশ ভালো আছে কিনা জানতে গেলে একজন আদিবাসীকে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা ভালো আছেন কিনা? একজন সংখ্যালঘুকে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা ভালো আছেন কিনা? তারা যদি বলে ভালো আছে, তাহলেই বুঝবো যে দেশের মানুষ আসলেই ভালো আছে। তার ব্যতিক্রম হলে বুঝবো দেশ ও দেশের মানুষ ভালো নেই।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা: গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, আমরা প্রতিবাদ, দাবি জানালেও কল্পনা চাকমাকে এই ২৯ বছরে খুঁজে পাইনি। রাষ্ট্র তার খোঁজ দেয়নি। আমরা শুধু বলেই যাচ্ছি। আমরা আদিবাসীরা পুরো বাংলাদেশে যে পরিমাণ গুম, খুনের শিকার হয়েছি তার বিচার পাওয়ার তো দূরের কথা, আমাদের অনেকের বিচার চাওয়ার সামর্থ্যও থাকে না। বাগদাফার্মে ৪ জন আদিবাসীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আসলে আদিবাসীদের প্রতি নিপীড়নের কোনো বিচারই পাইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার গঠিত হলেও এখনও কোন খাতে কোন ধরনের বৈষম্য রয়েছে তা ঠিক করা হয়নি। আমি আদিবাসীদের প্রতি নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এর এডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং বিভাগের পরিচালক এডভোকেট জনা গোস্বামী বলেন, ২৯ বছরে কল্পনা চাকমার বিষয়টি কোনো সুরাহা হয়নি, আমি এর প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই দায়টি শুধু পাহাড়ের মানুষ নিয়েছে। আমরা সমতলের বাঙালিরা এই দায়টি নেয়নি। কল্পনা চাকমার অপহরণ দিবসটি শুধু কেন আদিবাসী মানুষরা পালন করবে? যারা নিপীড়িত, মেইনস্ট্রিমের মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনাগুলো করা, এই কাজগুলো কোনো সরকার করেনি। একটা দেশকে অসাম্প্রদায়িক করা সহজ, কিন্তু একটা জাতিকে অসাম্প্রদায়িক করা খুব কঠিন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু এইটাও মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরও নতুন ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যেন পাহাড়িদের সাধারণ প্রশাসন শাসন করতে পারে না, তাদেরকে সেনা দিয়ে শাসন করতে হয়। এই দেশে মুক্তির স্বপ্ন দেখলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জনাকি চিসিম তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, এই দেশে রাজা আসে, রাজা যায় এবং আদিবাসীদের প্রতি সরকার ও রাষ্ট্রের আচরণ সবসময় একই। কল্পনা চাকমার মামলা বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে গলাটিপে দেওয়ার সমান। গুমের শিকার হওয়া কল্পনা চাকমা ফিরে না আসলেও, বর্তমানে আদিবাসীদের ঘরে ঘরে কল্পনা চাকমার জন্ম হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সবাই এখন সোচ্চার।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা কল্পনা চাকমার জন্য দিন গুনছি, প্রহর গুনছি যে উনি কবে আসবেন। কল্পনা কোথায় হারিয়ে গেল? ১২ তারিখে ওই দিন একটি নির্বাচন ছিল। তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু সেই তদন্তের রিপোর্ট আমাদের সামনে এখনও আসেনি। তিনি জুম্ম নারীদের উপর নিপীড়নের হাহাকার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ করেছিলেন। গুম করা সহজ কিন্তু প্রতিবাদী চিন্তা চেতনাকে দমন করা যায় না। সেনাবাহিনীর কাজ যেখানে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, কিন্তু সেই সেনাবাহিনী এখন পাহাড়ে ত্রাস হিসেবে কাজ করছে। আমরা আজকে শুধু বিচারহীনতার কথা বলব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দায়ের কথাও বলব। আমরা আশা করব, আগামী বছর যেন আমাদেরকে অপহরণ দিবস পালন করতে না হয়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কল্পনা চাকমা আদিবাসী নারী মুক্তির এক প্রতিবাদী প্রতিক। বারংবার রাষ্ট্র প্রতিবাদী কন্ঠস্বরগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চায়। কল্পনা চাকমাকে অপহরণ তারই একটি বহি:প্রকাশ। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আজ পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে কল্পনার জন্ম হয়েছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী এবং জুম্ম জনগণের মুক্তির জন্য ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে উক্ত আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

উক্ত আলোচনা সভায় সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বাংলাদেশ গারো স্টুডেন্টস ফোরাম , তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ হাজং স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ঢাকাস্থ ম্রো শিক্ষার্থী পরিবার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার।
https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%b9%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%be/

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *