আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে বলছেন রাজনীতিবিদরা

Jamuna Television

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেফতারের সময় মব তৈরি করে হেনস্থা করা হয়েছে। রোববার (২২ জুন) যখন তাকে বাসা থেকে বের করা হচ্ছিল, তখন এক ব্যক্তি গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং শরীরে আঘাত করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালের পর শুরু হয়েছে অন্য আলোচনা।

অনেকেই বলছেন, নুরুল হুদা ২০১৮-এর ‘রাতের ভোট’র মূল কারিগর। কিন্তু গ্রেফতারের সময় যেভাবে তাকে নাজেহাল করা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে তা স্পষ্ট অপরাধ।

জাহেদ উর রহমান

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় যমুনা টেলিভিশন টক শো রাজনীতিতে। বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান চরম উষ্মা প্রকাশ করেন। বলেন, নূরুল হুদার মতো লোকজন যা অপরাধ করেছেন, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতেই হবে। শেখ হাসিনাকে যারা স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছেন, তিনি সেই তালিকায় রয়েছেন। রাতের ভোট করেছেন। তাই বলে গ্রেফতারের সময় পুলিশের সামনে তাকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।

জাহেদ বলেন, কারা সাবেক সিইসি’র ওপর চড়াও হয়েছিল, তার ফুটেজ আছে। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। সে সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা উপস্থিত ছিলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

জোনায়েদ সাকি

যমুনা টেলিভিশনের আরেক নিয়মিত আয়োজন ২৪ ঘণ্টায় কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, কোনো মব অ্যাটাকই সমর্থনযোগ্য নয়। একজন যত অপরাধই করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবেক সিইসিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা যেহেতু রাতের ভোটকে ভালো ভোট বলেছিল, সাফাই গেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সাকি প্রশ্ন করেন, কেউ যদি হত্যার মতোও অপরাধ করে, তবে কি শাস্তি হিসেবে তাকে ধরে গণপিটুনির ব্যবস্থা করা যায়?

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনি আশা করেন, যেন প্রত্যেকের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। সঙ্গে অপরাধী হলে তার বিচার নিশ্চিত করা হয়।

হুম্মাম কাদের চৌধুরী

একই অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীও। তিনি এমন ঘটনাকে ‘অ্যাসল্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বলেন, কোনো আসামিকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তার পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাদের হেফাজতেই ‘অ্যাসল্ট’ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা এই ধরণের মব সৃষ্টি করছে, তাদের শুরু থেকেই আইনের আওতায় আনা উচিত ছিল। ৫ আগস্টের পর শুরু থেকেই আসামি নিয়ে কোর্টে যাওয়া-আসার সময় ডিম-জুতা ছোড়া হয়েছে। এগুলো বিএনপিরও কেউ যদি করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হতো। যারা এমন অপকর্ম শুরু থেকেই করেছে, তাদের মোটামুটি সবাই চেনে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমরা অনেকেরই মিডিয়া ট্রায়াল করে ফেলেছি। ভেবে ফেলেছি, ওমুকের ১০ বছরের জেল হওয়া উচিত, তমুকের ফাঁসি। এটা মোটেও কাম্য নয়।

নুরুল হক নুর

২৪ ঘণ্টায় অতিথি হিসেবে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনিও এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন। বলেন, এটা কোনো ভালো উদাহরণ হিসেবে সামনে আসছে না।

নুর বলেন, কেউ আইনের চোখে অপরাধ করলে তার তিনবার ফাঁসি দেন। কিন্তু জনসম্মুখে তাকে চড়ানো-থাপড়ানো মোটাও কাম্য না। এভাবে যে কাউকে ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ দিয়ে মব তৈরি করে নাজেহাল করা হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে এগুলো বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সব অতিথিই মব তৈরি করে হামলা-মারধরের কঠোর সমালোচনা করেন। এটা রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হবার পরামর্শও তাদের।

/এমএমএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *