ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস নিয়ে ট্রাম্প কি তাহলে মিথ্যা বলেছেন: রাফায়েল গ্রোসি

Google Alert – সামরিক

জাতিসংঘের পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মতে, তেহরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হবে।

গ্রোসির এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীত। ট্রাম্প বলেছিলেন, ওই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে গেছে’।

সমবার (৩০ জুন) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, গ্রোসির এ মূল্যায়ন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক বিশ্লেষণকে সমর্থন করে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালায়, তাতে কেন্দ্রীয় অবকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়নি। এতে ইরানের কর্মসূচি সাময়িকভাবে (সম্ভবত কয়েক মাসের জন্য) বাধাগ্রস্ত হয়েছেমাত্র।

চূড়ান্ত সামরিক ও গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ না পেলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে।

গতকাল রোববার সিবিএসে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখনোই বন্ধ হবে না। কারণ, ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি’ ইরানের ‘অপরিহার্য অধিকার’।

জুন মাসের শুরুতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হয়। তেল আবিবের ভাষ্য, এ হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে ইরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলছে, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে এখনো জোর বিতর্ক চলছে।

গত কয়েক দিনে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতায় এসবের কতটা প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

সপ্তাহজুড়ে গোপন সভার পর কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা স্বীকার করেছেন, এ হামলায় হয়তো ইরানের সব পারমাণবিক উপাদান ধ্বংস হয়নি। তবে তাঁদের দাবি, সেটা কখনোই সামরিক অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল না।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার গোপন বার্তা সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা যায়, ওই কর্মকর্তারা নিজেরাই স্বীকার করছেন, হামলাগুলো তাঁদের আশঙ্কার তুলনায় কম ধ্বংসাত্মক ছিল।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে চলমান বিভিন্ন মূল্যায়নের পটভূমিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি মন্তব্য করেছেন, ‘বিধ্বংসী অস্ত্র নিয়ে এমন শুরুতেই এভাবে সিদ্ধান্তে আসা কোনোভাবেই কার্যকর কৌশল নয়।’ সিবিএস আয়োজিত ‘ফেস দ্য নেশন উইথ মার্গারেট ব্রেনান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গ্রোসি বলেন, ‘তাদের (ইরানের) সক্ষমতা এখনো অটুট আছে। আমি বলব, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তারা কয়েকটি সেন্ট্রিফিউজ চালু করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে, হয়তো তার আগেও এটা সম্ভব। তবে খোলাখুলি বললে, এটা বলা যাবে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর কিছুই বাকি নেই।’

গ্রোসি আরও যোগ করেন, ‘এটা পরিষ্কার যে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ধ্বংস নয়। ইরানের সক্ষমতা রয়েছে, শিল্প ও প্রযুক্তিগত কাঠামো রয়েছে। তারা চাইলে যেকোনো সময় আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারে।’

অর্থসূচক/

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *