Google Alert – সামরিক
প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পর, দেশটি এখন তার আঞ্চলিক সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসে মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সমঝোতার টাইমলাইনও উঠে এসেছে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে সিরিয়া ও ইসরায়েল।
ইসরায়েলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় সরাসরি আলোচনা করেছে সিরিয়া ও ইসরায়েল। তাদের মধ্যে একটি ‘ব্যাকচ্যানেল’ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্ভাব্য চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এ চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
২০২০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে, যার পরে সুদান ও মরক্কোও এতে যুক্ত হয়। চুক্তিটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ট্রাম্প সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করেন। সৌদি আরব সফরের সময় তিনি সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে হয়তো সম্ভব হলেও এখনই সিরিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া অত্যন্ত কঠিন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতা বিরাজমান। বিশেষত ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ও ইসরায়েলের গোলান মালভূমি দখলের পর থেকে এ বৈরিতা গভীর হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সিরিয়ার সঙ্গে যে কোনো চুক্তির ক্ষেত্রেই ইসরায়েল গোলান মালভূমি তারা দখলে রাখবে। বিশ্লেষকদের মতে, অধিকাংশ সিরিয়ানই গোলান মালভূমি ইসরায়েলকে ছেড়ে দেয়ার বিরোধিতা করবে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করার এক সপ্তাহ পর দেশটির নতুন দখলকৃত ভূখণ্ডে বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে ভোট দেয় ইসরায়েল পার্লামেন্ট, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। বর্তমানে গোলানে ৩১ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে।
ইয়াসিন-কাসাব বলেন, ‘সিরিয়ানরা বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করে, সিরিয়া এখন আত্মরক্ষা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে সক্ষম নয়, তাই আলোচনায় যাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির মতো কোনো সমঝোতা এখন সবচেয়ে বাস্তবসম্মত।’
আল-শারার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চায় এবং ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি মানতে প্রস্তুত। তবে গত ডিসেম্বরে, আসাদ দেশ ছাড়ার দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ঘোষণায় এ চুক্তিকে বাতিল বলে উল্লেখ করেন। ইসরায়েল এর পর থেকে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনার ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে এবং সীমান্তের কাছাকাছি নতুন এলাকাও দখল করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সিরিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নেতানিয়াহু মার্কিন দূত টম ব্যারাককে এ আলোচনায় মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান চাচি হানেগবি এই আলোচনার তদারকি করছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও উপস্থিত রয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনা এখন ‘উন্নত পর্যায়ে’ রয়েছে।
নেতানিয়াহু সিরিয়ার সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি চান, যা হবে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির সাম্প্রতিক সংস্করণ। যার ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির কাঠামো গড়ে উঠতে পারে। তবে এর জন্য সিরিয়াকে কিছু শর্ত মানতে হবে। সিরিয়ায় কোনো তুর্কি সামরিক ঘাঁটি থাকবে না, ইরান ও হিজবুল্লাহর মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকবে না এবং দক্ষিণ সিরিয়া থাকবে নিরস্ত্রীকৃত তবেই শান্তিচুক্তিতে রাজি হবে নেতানিয়াহুর সরকার।