Google Alert – বাংলাদেশ
শ্রীলংকা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ। আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। টেস্ট সিরিজে হারলেও ওয়ানডে সিরিজে ভালো করতে চায় টাইগাররা। তবে ১৮ বছর পর এই প্রথম পঞ্চপান্ডবদের ছাড়া ওয়ানডে খেলতে মাঠে নামছে বাংরাদেশ দল। দেশের ক্রিকেটকে দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাটে-বলে মোহনীয় অবদানের জন্য এই পাঁচজনকে একত্রে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ উপাধিতে ভূষিত করার মাধ্যমে বিশেষায়িত করা হয়েছে ক্রিকেটাঙ্গনে। গেল ১৮ বছর ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ফরম্যাট ওয়ানডেতে পাঞ্চপাণ্ডবদের কেউ না কেউ দলে ছিলই। কিন্তু এবারের শ্রীলংকা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তাদের কেউই নেই। অর্থাৎ ১৮ বছর পর এই প্রথম ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারকে ছাড়াই ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে ওয়ানডেতে সবার আগে অভিষেক হয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার। ২০০১ সালের নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে অভিষেক হয়েছিল এই বোলিং অলরাউন্ডারের। এরপর ২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওয়ানডে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। একই দিনে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে অভিষেক মুশফিক রহিমেরও। তামিম প্রথম ওয়ানডে ক্যাপ পরেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে ওয়ানডেতে সবার পরে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহর। এখন পর্যন্ত লঙ্কানদের মাটিতে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে সিরিজ জিততে পারেনি লাল-সবুজ বাহিনী। এবার নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ মুছতে পারে কি না বাংলাদেশ, সেটিই দেখার অপেক্ষা। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির এই লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায়। মাঠের লড়াই শুরুর আগে চোখ রাখা যাক দু’দলের পরিসংখ্যানে।
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এগিয়ে শ্রীলংকা : দু’দল এখন পর্যন্ত ১০টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে। ২০০২ সালে প্রথম সিরিজ খেলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ সিরিজ হয়েছিল ২০২৪ সালে। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৬টি, বাংলাদেশ ২টি। বাকি ২টি সিরিজ ড্র হয়েছে।
মোট ম্যাচের হিসাবও লঙ্কানদের পক্ষে : মোট ৫৭ ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা জয় পেয়েছে ৪৩ ম্যাচে, আর বাংলাদেশ জিতেছে ১২টিতে। ২টি ম্যাচ ফলাফলবিহীন ছিল।
রানের রেকর্ডে শ্রীলঙ্কা শীর্ষে : দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ শ্রীলঙ্কার। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপে লাহোরে ৯ উইকেটে ৩৫৭ রান করেছিল লঙ্কানরা। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩২৪ রান। অন্যদিকে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডে ওপরে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে কলম্বোতে মাত্র ৭৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল।
সবচেয়ে বড় জয় ও পরাজয় : ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোস্ট অব স্পেনে ১৯৮ রানে জয় পায় শ্রীলঙ্কা, যা দু’দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ১৬৩ রানে।
ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড : দু’দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান মুশফিকুর রহিমের, ৩৯ ম্যাচে ১২০৭ রান। খুব কাছেই রয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা ৩১ ম্যাচে ১২০৬ রান। এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশানের ১৬১ রান (২০১৫, মেলবোর্ন)। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ মুশফিকুর রহিমের ১৪৪ রান (২০১৮ এশিয়া কাপ)।
সেঞ্চুরি ও ডাকের হিসাব : সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরি করেছেন সাঙ্গাকারা। আর সবচেয়ে বেশি ৫ বার ডাক মেরেছেন বাংলাদেশের রুবেল হোসেন। এক সিরিজে সর্বোচ্চ ২৪৮ রান করার রেকর্ড তিলকারত্নে দিলশানের। ২০১৪ সালে ৩ ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরিতে তিনি এই রানের পাহাড় গড়েছিলেন।
বোলিংয়ে মুরালিধরনের আধিপত্য : সবচেয়ে বেশি ৩১ উইকেট পেয়েছেন লঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন। এক ইনিংসে সেরা বোলিং ছিল চামিন্দা ভাসের, ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ রানে ৬ উইকেট, প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকসহ। মাত্র চারজন বোলার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন। তারা হলেন- দুশমন্ত চামিরা, চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও বাংলাদেশের আব্দুর রাজ্জাক।
ফিল্ডিং ও পার্টনারশিপে নজরকাড়া : মাহেলা জয়াবর্ধনে ২৬ ম্যাচে ১৮টি ক্যাচ নিয়ে আছেন তালিকার শীর্ষে। একই সঙ্গে উপল থারাঙ্গার সঙ্গে ২০১০ সালে করা ২১৫ রানের জুটি এখনো দুই দলের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
সবশেষে বলতে হয় এই সিরিজ শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং মর্যাদা, মানসিক চাপ ও আত্মসম্মানের লড়াই। দু’দলের সম্পর্ক যতটাই জটিল, ঠিক ততটাই আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজ। মাঠে এবার কারা বাজিমাত করেন, তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব ক্রিকেট ভক্তরা।