ইসরায়েলি হামলার পর ‘হরমুজে মাইন বিছানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল’ ইরান

Google Alert – সামরিক

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার পর গত মাসে তেহরান তাদের পারস্য উপসাগরে থাকা নৌযানের মধ্যে মাইন লোড করেছিল বলে জানিয়েছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা।


হরমুজ প্রণালী অবরোধে প্রস্তুতিস্বরূপ ইরান এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভেবে সেসময় ওয়াশিংটনের উদ্বেগও বেড়ে গিয়েছিল, বলেছেন তারা।


গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের আচমকা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কিছু সময় পর ইরানি সামরিক বাহিনীর ওই প্রস্তুতি মার্কিন গোয়েন্দারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়; এ প্রস্তুতির খবর সেসময় প্রকাশ করা হয়নি, বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ওই কর্মকর্তারা।


সংবেদনশীল গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে আলোচনা করায় নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছেন তারা।


সেই মাইনগুলো এখন পর্যন্ত হরমুজে পাতা না হলেও নৌযানে সেগুলো লোড করার তথ্যে বোঝা যাচ্ছে, তেহরান বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবেছে। প্রণালীটি বন্ধ করে দেওয়া হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের তীব্রতা আরও বাড়াতে ও বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটাতে পারতো।


বিশ্বের তেল ও গ্যাস সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়, সঙ্কীর্ণ এই জলসীমাটি বন্ধ হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিতো বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছিলেন।


তবে স্বস্তির বিষয় হল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উল্টো ১০%-র বেশি কমেছে। সংঘাত যেমনই চলুক, তেলের বাণিজ্যে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না- এমন ধারণা থেকেই তেলের দামের এ অবনমন বলে মনে করা হচ্ছে।


তেহরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণের কিছু সময় পর ২২ জুন ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের পদক্ষেপে সায় দিয়েছিল।


ইরানের প্রেস টিভি সেসময় জানিয়েছিল এ সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক নয়, প্রণালীটি বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে কেবল দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।


ইরান এর আগে অনেকবারই গুরুত্বপূর্ণ এ জলসীমা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যদিও তারা কখনোই সেই হুঁশিয়ারি কার্যকর করেনি।


দুই মার্কিন কর্মকর্তা বললেও, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তেহরান আদৌ তাদের নৌযানে মাইন লোড করেছিল কিনা, তা স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। প্রণালীজুড়ে মাইন বিছানো হলে ওই জলসীমা দিয়ে জাহাজ চলাচল কার্যত পুরোপুরি বন্ধই হয়ে যেত।


লোড করা মাইনগুলো আন-লোড করা হয়েছে কিনা, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


ইরানি নৌযানে মাইনগুলো ভরার তথ্য যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে সূত্রগুলো তা খোলাসা করেনি। সাধারণত উপগ্রহের ছবি কিংবা গুপ্তচরদের দেওয়া তথ্যে অথবা উভয় উপায়ের সম্মিলনে এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করা হয়।


হরমুজ বন্ধে ইরানের এমন প্রস্তুতি বিষয়ে মন্তব্য চাইল হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট যে অসাধারণভাবে অপারেশন মিডনাইট হ্যামার কার্যকর করেছেন সেটা, হুতিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান এবং সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশলের কারণে হরমুজ প্রণালী এখনও খোলাই রয়েছে, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হয়েছে, এবং ইরান ব্যাপক দুর্বল হয়েছে।”


পেন্টাগনের কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে জাতিসংঘের ইরান মিশনও সাড়া দেয়নি।


মাইন লোড করা ইরানের চালাকির অংশ, এমন সম্ভাবনাও ওয়াশিংটন উড়িয়ে দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা।


তারা বলছেন, তেহরান যে হরমুজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে তা ওয়াশিংটনকে বোঝাতেই শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সামরিক বাহিনী মাইন নিয়ে এ মিছেমিছি প্রস্তুতি দেখাতে পারে; হয়তো শেষ পর্যন্ত প্রণালীটি বন্ধ করতো না তারা।


কিংবা হতে পারে, তারা হয়তো আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল, যেন শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করা যায়।


ওমান ও ইরানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা এই হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগরকে দক্ষিণে ওমান উপসাগর ও তার পরবর্তীতে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।


প্রণালীটির সবচেয়ে সরু অংশ মাত্র ২১ মাইল চওড়া, সেখানে জাহাজের যাওয়া এবং আসার জন্য উভয় দিকেই মাত্র ২ মাইল প্রশস্ত নৌপথ রয়েছে।


জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশের জোট ওপেকের সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক তাদের অপরিশোধিত জ্বালানির বেশিরভাগই এই প্রণালী দিয়ে এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যত্র পাঠায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) রপ্তানিকারক কাতারের এলএনজির প্রায় পুরো চালানই যায় এই পথ দিয়ে।


ইরানও তাদের অপরিশোধিত জ্বালানির বেশিরভাগ পাঠাতে এই প্রণালীটিই ব্যবহার করে, যে কারণে তাত্ত্বিকভাবে জলসীমাটি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে তাদেরও আগ্রহ কম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে হরমুজ অবরোধ করার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ইরানের রয়েছে।


২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা এক হিসাবে ইরানের কাছে ৫ হাজারের বেশি নৌ মাইন রয়েছে এবং ইরান তাদের ছোট, দ্রুতগতির নৌকার সাহায্যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রণালীটিতে মাইন পাততে পারবে বলে ধারণা দিয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মাইনের সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই অনেকের অনুমান।


বাহরাইনে অবস্থিত মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের দায়িত্ব হচ্ছে ওই অঞ্চলে বাণিজ্য সুরক্ষিত রাখা। মার্কিন নৌবাহিনী সাধারণত বাহরাইন ও এর আশপাশে চারটি মাইন-প্রতিরোধী এমসিএম নৌযান মোতায়েন করে রাখে। বর্তমানে এই নৌযানগুলো লিটারাল কমব্যাট শিপ (এলসিএস) নামে ভিন্ন ধরনের নৌযান দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে; এগুলোও মাইন ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।


ইরানে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর আগে সব মাইন-প্রতিরোধী নৌযান বাহরাইন থেকে সাময়িক সময়ের জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেসময় ভয় ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পাল্টায় ইরান মার্কিন পঞ্চম নৌবহরকে নিশানা বানাতে পারে।


তবে শেষ পর্যন্ত ইরান কেবল কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সীমিত হামলা চালায়, তাতে কোনো হতাহত তো দূর সামান্য ক্ষয়ক্ষতিরও খবর পাওয়া যায়নি।


অবশ্য ইরান যে আরও পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *