Google Alert – কেএনএফ
বান্দরবানে রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি-কেএনএ’র বিরুদ্ধে অভিযান শেষে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা সেনা জোনের দরবার হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়।
সকালে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় সেনা অভিযানে দুই কেএনএ দুই সদস্য নিহত হয়। নিহতের মধ্যে কেএনএ’র একজন কমান্ডারও রয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।
তখন আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি এসএমজি, একটি রাইফেলসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
অভিযান শেষে সন্ধ্যায় রুমা সেনা জোনের দরবার হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন বলেন, “আমাদের এ অভিযান শুধু পাহাড়ে সশস্ত্র দলের বিরুদ্ধে। পাহাড়ে স্থানীয় শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি রয়েছে। আমরা যেমন এদেশের নাগরিক তারাও এদেশের নাগরিক। তাদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর।
“সন্ত্রাসীদের দমন এবং তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
অভিযান শেষে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ৭.৬২ মিলিমিটার রাইফেল একটি, এসএমজি তিনটি, ম্যাগাজিন আটটি, ৭.৬২ মিলিমিটার (৩৯ মিলিমিটার) ২৩৭টি গুলি, ৭.৬২ মিলিমিটার (৫৪ মিলিমিটার) ৬০টি গুলি, ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোনসহ ৫২ ধরনের সরঞ্জাম।
জোন কমান্ডার আলমগীর হোসেন বলেন, “এবারে কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের নমুনা দেখে বুঝা যায়, পালিয়ে যাওয়া বম সম্প্রদায়ের যাওয়া ১২৬টি পরিবার নিজভূমিতে পুনরায় ফিরে আসায় সন্ত্রাসীরা নতুনভাবে জানান দিতে এই পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।
“কেএনএ একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী; যারা বান্দরবান ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় মুক্তিপণ আদায়, ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগ রয়েছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে।”
তবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা জানান, এই অভিযানের কারণে পাহাড়ে পর্যটন স্পটগুলোতে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। পর্যটন স্পটগুলো খোলা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযানে নেতৃত্ব দেন রুমার ৩৬ বীর সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ মেহেদী সরকার। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
এদিকে নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের নাম-পরিচয় জানিয়েছে আইএসপিআর। তার নাম পুটিং/ ডলি। কেএনএফ এর নেতৃত্ব পর্যায়ের মেজর পদবির সশস্ত্র সদস্য ছিলেন তিনি।
“নিহত আরেকজন কেএনএফ এর সশস্ত্র শাখার সদস্য ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।”
শুক্রবার সকালে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন রুমা থানা ওসি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।
পাহাড়িরা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে চেনে ‘বম পার্টি’ নামে। সংগঠনটি ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়; যেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না; থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।
কেএনএফ ও কেএনএ’র বিরুদ্ধে অভিযানের মুখে বিভিন্ন সময় বম সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি ভারতের মিজোরাম ও বনজঙ্গলে আশ্রয় নেন। বমদের সামাজিক সংগঠন বম সোশাল কাউন্সিল ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় সম্প্রতি তারা ভিটেমাটিতে ফিরতে শুরু করেছেন। বম সোশাল কাউন্সিল বলছে, তিনশ পরিবার এলাকায় ফিরে খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন: