নানা জটিলতায় আটকা বিটিসিএলের ৫জি প্রকল্প

Bangla News

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিনের সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল একটি এনটিটিএন লাইসেন্সধারী হলেও কার্যকরভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। অথচ বর্তমানে দেশের প্রধান এনটিটিএন অপারেটররা ডিডাব্লিউডিএম ইকুইপমেন্টের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৪৮ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে।

আর সেখানে দেশের এনটিটিএন সেক্টরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আধিপত্য বিস্তার করেছে।  

এই বেসরকারি এনটিটিএন অপারেটররা মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে আসছে। তবে এই বেসরকারি অপারেটরদের উচ্চ মূল্য ও সীমিত বিনিয়োগের কারণে সেবা গ্রহণকারীরা সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যায় পড়ছেন।


তবে এখন ৫জি রেডিনেস প্রকল্পের মাধ্যমে বিটিসিএলের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে, যা সফল হলে এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও আধুনিক এনটিটিএন অপারেটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।  


প্রকল্পটি দেশের প্রত্যেক উপজেলা পর্যন্ত ১০০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপন করবে, জেলা শহরে ৩০০ জিবিপিএস এবং মহানগরীতে সর্বোচ্চ এক হাজার জিবিপিএস সক্ষমতার নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে। এর ফলে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোর গতি ও ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বাংলাদশের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার ৩৫ টেরাবাইট যা এ বছরের মধ্যেই ৫০ টেরাবাইটে পৌঁছাবে এবং আগামী পাঁচ বছরে এই ব্যবহার চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাবে।


বিটিসিএল এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের প্রায় ৩০ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৫০ জিবিপিএস সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করবে, যা আগামী দশকের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


বিটিসিএল এই প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে। এর ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিসিএল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং বেসরকারি এনটিটিএন অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে।  


অন্যদিকে মোবাইল অপারেটর ও অন্যান্য সেবাদাতারা উন্নতমানের ব্যাকহল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে, যা দেশের ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাবে।


প্রকল্পের মোট অনুমোদিত বাজেট ছিল এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরাসরি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪৬৩ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক টেন্ডারে হুয়াওয়ে কোম্পানি সর্বনিম্ন দর ৩২৬ কোটি টাকায় এই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, যা অনুমোদিত বাজেটের থেকে প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা কম। কিন্তু এরপরেও টেন্ডার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।


দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত বাধায় প্রকল্পের অগ্রগতি আটকে রয়েছে। যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছালেও তা মুক্তি পাচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিসিএলের কর্মকর্তাগণ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছেন। তারা আশাবাদী, দ্রুত যন্ত্রপাতি মুক্তি পেলে বিটিসিএল ৫জি সেবা প্রদানে সক্ষম হবে এবং দেশের ডিজিটাল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।


প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এবং যন্ত্র্রপাতি সরবরাহকারীরা বলছেন, প্রশাসনিক জটিলতা ও বিভিন্ন স্তরের বাধা কাটিয়ে না উঠলে দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেরি হবে এবং ৫জি প্রযুক্তির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগবে। দেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনোযোগ ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ ছাড়া এই প্রকল্পের সুফল পাওয়া কঠিন হবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হবে।


এমআইএইচ/আরএ 

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *