Bangla Tribune
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ছয় সাংবাদিক। ঢাকার রাজপথ থেকে শুরু করে জেলা শহর পর্যন্ত তারা ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী, তথ্যানুসন্ধানী জনতার কণ্ঠস্বর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলির মুখেও সংবাদ সংগ্রহে পিছপা হননি তারা। জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হলেও তাদের সেই আত্মত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। নিহতদের পরিবারগুলোও পায় কোনও স্থায়ী সহায়তা।
সরকার কিংবা মূলধারার সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সেটি রয়ে গেছে সাময়িক অনুদান বা শোকবার্তায় সীমাবদ্ধ। শহীদ সাংবাদিকদের কেউ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, কেউবা ছিলেন নবজাতক সন্তানের বাবা। কোনও কোনও পরিবার আর্থিক সহায়তা পেলেও কারও কারও পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উত্তাল জুলাইয়ে সারা দেশে যখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তখন সাংবাদিকরাই ছিলেন একমাত্র তথ্য সরবরাহের মাধ্যম। তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সে সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে সারা দেশে ছয় জন সাংবাদিক নিহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকায় তিন জন, সিলেটে দুই জন এবং সিরাজগঞ্জে নিহত হন একজন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক। অনুসন্ধানকালে দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কাছে জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত সাংবাদিকদের বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও আন্দোলন চলাকালীন ৩০ জুলাই পর্যন্ত আহত-নিহতদের নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে ‘কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহত ৪ সাংবাদিক, জখম দুই শতাধিক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জুলাই আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি উত্তাল ছিল যাত্রাবাড়ী এলাকা। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৮ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে প্রথম নিহত হন ঢাকা টাইমসের স্টাফ রিপোর্টার হাসান মেহেদী। একই দিন বিকালে উত্তরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দৈনিক ভোরের আওয়াজের প্রতিবেদক শাকিল হোসাইন নিহত হন। এছাড়া ১৯ জুলাই সিলেট শহরে দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেটে প্রতিনিধি আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব নামে আরেক সাংবাদিক পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। একই দিনে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ফ্রিল্যান্সার ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
এরপর ৪ আগস্ট সিলেটের হবিগঞ্জে বানিয়াচং থানার সামনে নিহত হন স্থানীয় সাংবাদিক হোসেন আখুঞ্জি। সর্বশেষ ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্রের প্রতিবেদক সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।
জুলাই আন্দোলনের এক বছর পর কেমন আছেন নিহত ছয় সাংবাদিকের পরিবার? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— প্রতিটি পরিবারে বিরাজ করছে হতাশা, আর অনিশ্চয়তায় ঘেরা ভবিষ্যৎ। কারও ঘরে বাবার জন্য অপেক্ষারত তিন বছরের শিশু প্রশ্ন—‘বাবা কোথায়?’ , কেউ আবার ছেলের ছবি বুকে চেপে দিন গোনেন বিচার পাওয়ার আশায়। সামান্য কিছু অনুদান ও সহানুভূতির শব্দ ছাড়া রাষ্ট্র কিংবা মূলধারার সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বেশির ভাগই এসব পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি। এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ছয় শহীদ সাংবাদিকের স্বজনদের বেদনা, হতাশা আর টিকে থাকার লড়াইয়ের বয়ান।
বিচার চান সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকা টাইমস-এর সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পরিবারসহ ছোট দুই ভাইয়ের খরচও তিনিই বহন করতেন। মৃত্যুর দুই দিন পর তাকে পটুয়াখালীর বাউফলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার দুটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি বর্তমানে দুই মেয়েকে নিয়ে জামালপুরে বাবার বাড়িতে থাকেন।
নিহত মেহেদীর বাবা প্রবীণ সাংবাদিক এইচ এম মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে ওইদিন দুপুরে শেষবার কথা হয়। সে বলেছিল— মাকে চিকিৎসা করাইও, পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। এরপর সন্ধ্যায় খবর পাই পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি চারবার স্ট্রোক করেছি, হার্টে তিনটা ব্লক। মেহেদী না থাকায় এখন আমার চিকিৎসাও বন্ধ।’
সরকার থেকে একটি তিন লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর ২৭ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের নামে মামলা করেছিল। অথচ আমার ছেলেকে তো পুলিশই হত্যা করেছে। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর আমি নিজে বাদী হয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ২৮ নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। এখন সেটি বিচারাধীন। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই।’
আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে গেছে: সাংবাদিক শাকিল হোসেন পারভেজের বাবা
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার তরুণ রিপোর্টার ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন পারভেজ। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কাফিলাতলীর মো. বেলায়েত হোসেনের ছেলে শাকিল। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
শাকিলের বাবা মো. বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শাকিল ছিল আমার একমাত্র ছেলে। গুলি করে ওর বুকটা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকেরা রাস্তায় ফেলে তাকে হত্যা করেছে। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭২ জনের নামে মামলা করেছি, যা এখনও বিচারাধীন।’
তিনি জানান, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু ছেলেকে তো আর ফেরত পাবেন না।
‘আমি চাই, আমার ছেলে হত্যার বিচার হোক। যদি এখন বিচার না হয়, পরে হবে কিনা জানি না। আমি শুধু ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি’- কাঁপা কণ্ঠে বলছিলেন এই বাবা।
আন্দোলনের ছবি তুলতে গিয়ে নিহত হন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, শুক্রবার। দিন ছিল রক্তাক্ত ও বিভীষিকাময়। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় জুমার নামাজের পর আন্দোলনের ছবি তুলছিলেন ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
রংপুর শহরের জুম্মাপাড়ার আবু হেনা মোস্তাফার ছেলে প্রিয় ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান। নিহত প্রিয়র স্ত্রী লোটাস তার পাঁচ বছরের একমাত্র মেয়ে পদ্ম প্রিয় পারমিতা জামানকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। প্রিয়র মা শামসি আরা জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছবি তোলা ছিল ওর নেশা। আন্দোলনের খবর কভার করতে গিয়েছিল সে। ওরা আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু আমি চাই না আর কোনও মা তার সন্তানকে এভাবে হারাক। যারা গুলি চালিয়ে আমার ছেলেকে মেরেছে, তাদের বিচার হোক। জুলাই যেন আর কখনও ফিরে না আসে, এটাই আমার চাওয়া।’
বিচারের অপেক্ষায় তুরাবের পরিবার
১৮ জুলাই, শুক্রবার। জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারীদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে সিলেট নগরী। শহরের বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের সামনে মিছিলের ছবি তোলার সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাব। যদিও তিনি সাংবাদিক লেখা চেস্টগার্ড ও হেলমেট পরা ছিলেন। এরপরও পুলিশের গুলিতে তার শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়। নিহত হন তিনি। ১৯ জুলাই সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার, উপকমিশনার, দুই থানার ওসি এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে সিলেটের মহানগর দায়রা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর)। বর্তমানে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
আবুল আহসান আযরফ বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে সাংবাদিকের জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরা ছিল। এরপরও পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে ৯৮ রাউন্ড গুলি করেছে। তার শরীরটা ঝাঁঝরা করে ফেলে। সংবাদ সংগ্রহ করাটাই কি তার অপরাধ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের এক বছর হয়ে গেছে, এখনও আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি। বিচার কাজ শেষ হয়নি। এ সরকার বিচার না করলে অন্য সরকার কি বিচার করবে?’
নিহত সাংবাদিক তুরাব সিলেটের বিয়ানীবাজারে আব্দুর রহিমের ছেলে। তার বাবাও একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সিলেট প্রেস ক্লাবের টানা চারবার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তুরাব ছিলেন সবার ছোট। গত বছরের ১২ মে লন্ডন প্রবাসী তানিয়া ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তুরাবের। বিয়ের ২ মাস ৬ দিনের মাথায় নিহত হন এই সাংবাদিক।
মানবেতর জীবন করছে প্রদীপ কুমার ভৌমিকের পরিবার
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গত বছরের ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রদীপ মারা যাওয়ার পর শহীদের স্বীকৃতি ও সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করা হলেও আজ অবধি তার নাম কোনও তালিকায় ওঠেনি।
সাংবাদিক প্রদীপ কুমারের ছোট ছেলে সুজন কুমার ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিন বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র আশ্রয়। দুই বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া বাবাকে অনেক কষ্টে সুস্থ করেছিলেন তারা। কিন্তু আন্দোলনের দিন বাবার রক্তাক্ত মরদেহ দেখে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তাদের পরিবারে। তিনি বলেন, ‘বাবা ছাড়া আমাদের আর কেউ ছিল না। এখন আমাদের মানবেতরভাবে দিন কাটছে।’ সরকারিভাবে কোনও সহায়তা না পেলেও বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কণ্ঠ থেকে ২ লাখ এবং সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন তারা।
সুজন নিজেও এখন পিতার পেশাকে আঁকড়ে ধরে সাংবাদিকতা করছেন। তিনি বলেন, ‘এই পেশায় আসাটাও বাবার অনুপ্রেরণায়। প্রথমে দৈনিক সবুজ বাংলা, এরপর বাবার মৃত্যুর পর খবরপত্রে কাজ করি। এখন কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি।’
প্রদীপ কুমার ভৌমিকের বড় ছেলে সুব্রত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পরিবারের সার্বিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ‘শহীদ’ স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ এ পরিবারটি।
তিন সন্তান নিয়ে নিঃসঙ্গতায় দিন কাটছে সোহেল আখঞ্জীর স্ত্রীর
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সোমবার। হবিগঞ্জের বানিয়াচং। মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বানিয়াচং থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাংবাদিক সোহেল আখঞ্জী। তিনি ছিলেন দৈনিক লোকালয় বার্তা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক।
নিহত সোহেল আখঞ্জীর স্ত্রী মৌসুমি আক্তার বাংলা ট্রিবিউন জানান, পাশে দাঁড়ানোর মতো আমাদের কোনও স্বজন নেই। কেবল তিন সন্তান নিয়ে নিঃসঙ্গভাবে জীবন কাটাচ্ছি। সরকার ও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। ঋণ পরিশোধসহ একটি ঘর তৈরি করতে পেরেছি। মৌসুমি আক্তার জানান, তাদের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, আর ছোট মেয়ের বয়স আড়াই বছর। ‘বাচ্চারা প্রায়ই বলে, মা, বাবাকে কল দাও। তাদের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর আমার জানা নেই।
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মৌসুমি বলেন, ‘আমার সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকার নিলে ভালো হতো। আর আমাকে একটা চাকরি দিলে অন্তত সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আমি যদি মারা যাই, তাদের দেখবে কে?’ স্বামী হত্যার সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন তিনি।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিকদের আত্মদান ও অবদান’ নামে বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে। বইটির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে ছয় সাংবাদিকের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক ইয়াসির আরাফাত ও সিলমী সাদিয়া। এই বইয়ের সহ-লেখক বাংলাদেশ ফ্রি প্রেস ইনিশিয়েটিভের যুগ্ম আহ্বায়ক সিলমী সাদিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুব প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের কেউ জুলাইয়ে শহীদ হননি। হয়তো বা একারণেই জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ সাংবাদিকদের নিয়ে আলাপ কম। যারা সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের পরিবার সরকারি অর্থ সহায়তা কমবেশি পেয়েছে সবাই। কিন্তু যথাযথ সম্মানটা পাননি বলতেই হবে। ৬ জন শহীদ সাংবাদিকের কোনও পরিবার সচ্ছল। আবার কোনও পরিবার বেশ দরিদ্র, ঋণে জর্জরিত। যার যার ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নিতে পারতো। সেটি নেওয়া হয়নি।’
জুলাই আন্দোলনে কতজন সাংবাদিক নিহত ও আহত হয়েছেন? এমন প্রশ্নে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ও তথ্য অধিদফতর এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাদের কারও কাছেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব ব্যাপারে মূলত কাজ করার কথা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এবং সরকারের বিভিন্ন অধিদফতরের। আমাদের মতো ছোট ছোট সংগঠনগুলো মূলত সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে কাজ করে থাকে।