বিরোধের শোধ নিতে ‘মব’ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেন ছোট

Bangla News

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।  


তারা বলছে, পূর্বশত্রুতার জেরে বড় ভাই ফজর আলীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে তারই আপন ছোট ভাই শাহ পরান ‘মব’ সৃষ্টি করে ভুক্তভোগী নারী ও অভিযুক্তকে নির্যাতন, শ্লীলতাহানির পর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।


এ ঘটনায় ফজরের ছোট ভাই মো. শাহ পরানকে (২৮) বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার বুড়িচং থানার কাবিলা বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। এ সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।


পরে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।


তিনি জানান, বাহেরচর গ্রামের শহিদের বড় ছেলে ফজর আলী ও ছোট ছেলে শাহ পরান দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী নারীকে উত্যক্ত করে আসছিলেন। ঘটনার দুই মাস আগে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।  


এরই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম্য সালিশে জনসমক্ষে বড় ভাই ফজর আলী তার ছোট ভাই শাহ পরানকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে শাহ পরান তার বড় ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সালিশের কয়েক দিন পর ভুক্তভোগী নারীর মা ফজর আলী কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদে ধার নেন।


লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ভুক্তভোগীর মা-বাবা নিকটবর্তী জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা দেখতে যান। এই সুযোগে ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে রাত সাড়ে ১১টায় কৌশলে ভুক্তভোগীর শোবার ঘরে প্রবেশ করেন।  


২০ মিনিট পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগীর বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করা মামলার মূল হোতা শাহ পরান ও একই গ্রামের আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান এবং অজ্ঞাত ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙে ভুক্তভোগীর শোবার ঘরে প্রবেশ করেন এবং ভুক্তভোগীকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং তার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।


এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, ঘটনার পর শাহ পরানসহ আবুল কালাম ও অন্য আসামিরা আত্মগোপন করেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, পূর্বশত্রুতার কারণে তার ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে তার নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য আসামিদের সহায়তায় ভুক্তভোগী নারী ও ফজর আলীকে নির্যাতন, শ্লীলতাহানি এবং তাদের অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।


তিনি জানান, শাহ পরান মব সৃষ্টির জন্য ইমোতে অন্যদের মেসেজ দিয়ে ডেকে আনেন। তাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তর করার কাজ প্রক্রিয়াধীন। অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


গত ২৬ জুন রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের বাহেরচর গ্রামের ওই নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হন। সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ২৯ জুন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।


এসসি/আরএইচ

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *