শহর ঢাকার ফলের মেলায় জুম পাহাড়ের ঘ্রাণ

Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের স্টলে একটি আমের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম। স্ত্রীকে বলছিলেন, “দেখো কত বড় আম!”

রফিক যে আমটি দেখে বিস্মিত হলেন, সেই আমের নাম ‘ব্রুনাই কিং’। স্টলে থাকা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক বাসিংমং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, ” আমটি আড়াই কেজি ওজনের। একটি আমই ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়।”

স্টলে চোখ পড়তেই দেখা গেল ‘কাটিমন’, ‘বারি ০৪’, ‘কিউজাই’, ‘চেংমাই’ এবং ব্রুনাই কিং’ প্রজাতির আম সাজানো রয়েছে। এর মধ্যে ব্রুনাই কিং এবং চেংমাই প্রজাতির আম নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহ প্রবল।

শুধু আম নয়, পাহাড়ি নানা ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যও আছে।

‘পাহাড়ি ফলের ঘ্রাণ, বৈচিত্র্যময় প্রাণ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ মেলার আয়োজক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ফল ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে দেশের মূলস্রোতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গত ১ জুলাই থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘পাহাড়ি ফল মেলা’, যা শনিবার পর্যন্ত চলবে।

বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে লংগান, আনারস, রাঙগুই আম, চিয়াংমাই আম, কিং অব চাকাপাদ আম, লাল ড্রাগন ফল, বড় আকারের লটকন, পাকা পেঁপে, কাউফল, পেয়ারা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের রসালো ফল।

এ ছাড়া পাহাড়ে উৎপন্ন বিন্নি চাল, জুমের চাল, বাঁশের কোরল, জুমের মিষ্টিকুমড়া, পাহাড়ি কাজুবাদাম, আচার, পাহাড়ি মরিচ, পাহাড়ি মধু, চিংড়ির বালাচাও, পাহাড়ি নারকেল, তেজপাতা, শুকনা রোজেলাসহ নানা রকম পাহাড়ি খাবার; যা স্টল ও মান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন অভিনেতা এহসানুর রহমান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরই এই মেলায় আসি। এখানে যা পাওয়া যায়, তা তো বাইরেও পাওয়া যায়। তবে এখানে অথেনটিক পণ্য পাওয়া যাবে, এই আশাতেই এখানে এসে কিছু কেনাকাটা করি। এবারও এসেছি।”

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক বাসিংমং বলেন, “আমাদের স্টলে বিক্রির জন্য কিছু নেই। সবই শুধু প্রদর্শনীর জন্য।”

বান্দরবান জেলা পরিষদের একটি ক্যাটলগে থেকে জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি ফল উৎপাদিত হয় বান্দরবান জেলায়। পাহাড়ে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান শুরু হয় ২০০৪ সালের দিকে।

পাহাড়ের মাটি এবং আবহাওয়া আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আনারস, কমলা ও মাল্টা চাষের উপযোগী। বর্তমানে এ জেলায় বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমও উৎপাদিত হচ্ছে। বান্দরবানের আম খুব সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এখানে উৎপাদিত ফল চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। বিদেশি জাতের আমের মধ্যে রেডফর্মা, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই, রেডকুইন উল্লেখযোগ্য।

এবার মেলায় বিক্রি নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন অনুমা বনরুপা ফল বাজারের স্বত্ত্বাধিকারী সুমন চাকমা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার বিক্রি ভালো নয়। গতবার যে আম বিক্রি করছি ৮০০ টাকায়, সেই আম এবার ৫০০ টাকা করেও নিচ্ছে না। গতবার প্রতিদিন ১ লাখ টাকা বিক্রি করছি। এবার চার দিনেও ২ লাখ টাকা বিক্রি হয়নি। শেষ দিনে একটু ভালো বিক্রির আশায় আছি।”

রাঙামাটির রূপা মোহন চাকমা বসেছিলেন ‘দিগলীবাক কৃষিপণ্য স্টোরে। তিনি স্টলের উদ্যোক্তাদের একজন।

রূপা মোহন বলেন, “আমরা মূলত মেলা উপলক্ষে এই স্টল দিয়েছি। আমাদের চাষ করা, আর কিছু বাইরে থেকে কিনে এনে বিক্রি করি। বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে না।”

লেবু, কলা, মিষ্টি কুমড়া, মুলার শুকনা, কাঁচামরিচ, মসলা, আনারস, কাঁঠাল রয়েছে এই স্টলে।

শুক্র ও শনিবার মেলায় ভালো বিক্রি হবে বলে আশা রূপা মোহনের।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফল উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার, অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।

পাহাড়ের আম মিষ্টি, সুস্বাদু, আঁশবিহীন ও ছোট আঁটিযুক্ত হয়। আনারস সাধারণত বড় আকারের এবং মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। পাকা অবস্থায়ও আনারস সবুজাভ হয়ে থাকে। চোখ প্রশ্বস্ত ও চেপ্টা হয়। গড় ওজন প্রায় ২ কেজি। পাহাড়ের ড্রাগন ফলও অত্যন্ত সুস্বাদু এবং আকারে বড় হয়।

রেনেসাঁ চাকমা নামে একটি স্টলে কথা হয় নিখুঁত দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমাদের স্টলে ফল নেই। তবে ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে তৈরি তেল, স্লিমিং সিডস, আয়ুর্বেদিক হেয়ারপ্যাক, রেডচিলি পাওডার, নারিকেল তেল, হেয়ার কালার আছে। মূলত রেনেসাঁ চাকমা এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্যেক্তা। আমি তার সহকারী।”

মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সংস্থা ও উদ্যোক্তারা পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত দেশীয় ও মৌসুমি ফল, প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্য ও হস্তশিল্প সামগ্রী নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নগরবাসী যেমন পাহাড়ি ফল ও পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হবেন, তেমনি পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিজ ও সাংস্কৃতিক অর্থনীতির উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *