গুমের প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা

Google Alert – কেএনএফ

কিছু সেনাসদস্য যারা ডেপুটেশনে (প্রেষণ) ছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এসেছে। তাদের তদন্ত চলমান। তদন্তে যদি গুমের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সেনাসদর। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নির্দেশ পেলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় প্রস্তুত সেনাবাহিনী। পাশাপাশি পাঁচ আগস্টের পর লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৮০ শতাংশ অস্ত্র ও এমুনেশন উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ নির্বাচনের আগেই উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। যাতে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়া যায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, গুমের ঘটনাগুলোতে র‌্যাব ও ডিজিএফআইতে কর্মরত অনেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান কী। জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সদস্য ডেপুটেশনে যেসব সংস্থায় থাকে, এই সংস্থাগুলো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। কিছু কিছু সেনাসদস্য যারা ডেপুটেশনে ছিল তাদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এসেছে। তাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে যদি তাদের গুমের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পায়, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা পাইনি। আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি আছে। যখন আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা পাব, এই নির্দেশনা মোতাবেক একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহায়তা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে।

তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বান্দরবানের রুমা উপজেলার পলিপাংসা-মুলফিপাড়া এলাকায় কেএনএ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এর মধ্যে দুজন কেএনএ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। পাশাপাশি তিনটি এসএমজি, একটি চাইনিজ রাইফেল এবং ৩৬৪ রাউন্ড এমুনেশনসহ আরও সরঞ্জামাদি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা একটা বড় সাফল্য বলে মনে করছি। পাশাপাশি কেএনএফ-এর ভয়ে যারা বিভিন্ন বম পরিবার বসতবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৩৮ জন গত সপ্তাহে তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছে।

কিশোর গ্যাং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত মাসের তুলনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা চলমান আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসলে সেনাবাহিনীর পক্ষে অলিগলিতে উপস্থিতি থাকা সম্ভব নয়। যে কোনো ঘটনা ঘটছে, আমরা দ্রুতগতিতে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনের মব ভায়োলেন্সের শিকারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলতে পারি-ওই ঘটনার পর ছয় জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে একজনকে পরের দিনই গ্রেফতার করেছি। পরে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য আদালতে হস্তান্তর করেছি। তবে কোনো অভিযুক্ত (ঘটনার মূল হোতা) যদি আগাম জামিন পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু করার থাকে না। তবে যে কোনো মব ভায়োলেন্স ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো ঘটনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সোচ্চার ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে।

দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটি অফিস খোলার প্রক্রিয়া চলছে, সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকই লেখালেখি করছেন, বিশেষ করে করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা এটি সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা মনে করি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে। সেনাবাহিনী গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী মোট ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জড়িত অভিযোগে ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। ইউপিডিএফের একটি ক্যাম্প ধ্বংস করেছে। রাঙামাটিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে একজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *