Bangla Tribune
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্দর চলবে না, এমন প্রচারণা চালিয়ে গত ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এনসিটি টার্মিনালটি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে রাখা হয়েছিল। গত ১৭ দিনে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ড্রাইডক পরিচালনা করছে এনসিটিকে। ১৭ দিনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমেছে ১০ ঘণ্টা।’ এটাকে বড় ধরনের অর্জন বলে দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শন ও চট্টগ্রাম বন্দরে কেমিক্যাল শেডের উদ্বোধনে এসে এ কথা বলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে যে প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তারাও তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ভালো করেছে। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালনা শুরু হওয়ার পর আরও ভালো করছে। এই ধারা ধরে রাখতে হবে। বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। এর জন্য বন্দরে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার বন্দরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে চায়। সেটা করতে হলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। কিন্তু বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ এসব অপপ্রচারে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।
বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এককভাবে মাশুল বাড়ায়নি। আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রধান বন্দরের চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল এখনও অনেক কম।’
নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী জানান, খুব অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়েছে নৌবাহিনীকে। তাই শুরুকে ছোট বড় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দিন দিন অপারেশন আরও স্মুথ হচ্ছে। খুব শিগগির বন্দর অপারেশনে আরও গতিশীল হবে বলে জানান তিনি। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে এমন একটি খবর কয়দিন ধরেই বন্দর ব্যবহারকারীদের মুখে মুখে ঘুরছে। কিন্তু বন্দরের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি এতদিন। অবশেষে নৌ-পরিবহণ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন বন্দর চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামান।
এর আগে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের পক্ষ থেকে ১৭ দিনের অপারেশনের চিত্র তুলে ধরা হয়। ড্রাইডক জানায়, এ সময়ের মধ্যে দৈনিক গড় হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ টিইইউএস কন্টেইনার। আগের ১৭ দিনে যার সংখ্যা ছিল গড়ে ২ হাজার ৮৪৫ টিইইউএস। সবমিলিয়ে ১৭ দিনে মোট ৪০৫ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। শতাংশের হিসেবে যা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড মোট ৩০টি জাহাজের কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এনসিটির ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে একযোগে ৪টি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।