নকল পাসপোর্টে তুরস্কে হামাস প্রধানের বিধবা স্ত্রী, গোপনে বিয়ে

চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

নিহত হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের স্ত্রী সামার মোহাম্মদ আবু জামার নকল পাসপোর্ট ব্যবহার করে গাজা থেকে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে বর্তমানে তুরস্কে বসবাস করছেন। নিহত হামাস প্রধানের বিধবা স্ত্রী সেখানে গোপনে পুনরায় বিয়েও করেছেন বলে জানা গেছে।

২৭ জুলাই সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১১ সালে হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সাথে বিয়ে হয়েছিল সামারের। পরবর্তী সময়ে সামার গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ধর্মতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

এক গাজাবাসীর বরাতে সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানায়, সে আর এখানে (গাজা) নেই; এখন সে তুরস্কে। বাচ্চাদেরও নিয়ে গেছেন নিজের সাথে। তার পালানোর জন্য প্রয়োজন হয়েছিল লজিস্টিক সহায়তা, উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ, যা সাধারণ গাজাবাসীর সাধ্যের বাইরে।

জানা গেছে, গাজার রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিশরে প্রবেশ করেন সামার মোহাম্মদ আবু জামার এবং অন্য এক গাজার বাসিন্দা নারীর নামে পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

২০২৪ সালের অক্টোবরে সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর, তিনি তুরস্কে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ নেতা ফাতি হাম্মাদ এই বিয়ের আয়োজন করেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। হাম্মাদ এর আগে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে হামাস নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও জানানো হয়।

ওয়াইনেটের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকে হামাস একটি গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, যার মাধ্যমে জাল কাগজপত্র ও মিথ্যা চিকিৎসা প্রতিবেদন ব্যবহার করে হামাসের সিনিয়র নেতাদের পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল।

সিনওয়ারের ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এই একই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গাজা ছাড়েন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি কোথায় আছেন, তা আর জানা যায়নি।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই দুই নারী তাদের স্বামীদের নিহত হওয়ার আগেই রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজা ত্যাগ করেছিলেন।

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় এক অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করে। একটি ড্রোনের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় তাকে শনাক্ত করা হয়। প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, ধুলোমাখা চেহারায় একটি চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ড্রোন লক্ষ্য করে একটি লাঠি ছুড়ে মারেন তিনি। এরপরই ইসরায়েলি গুলিতে তিনি নিহত হন।

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ২১তম মাসে প্রবেশ করেছে এই যুদ্ধ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও জ্বালানির প্রবেশ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়ায় পুরো গাজা জুড়ে চরম অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অনাহারে অন্তত ১১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু ও নবজাতকও রয়েছে। প্রায় ১ লাখ নারী ও শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টায় নিহত হয়েছেন আরও এক হাজারের বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজারের বেশি, বেশিরভাগই সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে ছিলেন।

জাতিসংঘ-সমর্থিত আইপিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজার ২১ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ পর্যায় ৫ অর্থাৎ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ৫ বছরের নিচের ৭১ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজার গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী নারী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাজার তিন-চতুর্থাংশ মানুষই চরম খাদ্য সংকটে, অথচ জীবনরক্ষাকারী সহায়তা সীমান্তে আটকে আছে, ক্ষুধার্ত মানুষের নাগালের বাইরে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *