সরকারি বেতন বাড়াতে কমিশন গঠন, ৬ মাসের মধ্যে সুপারিশ

Google Alert – বাংলাদেশ

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে ২৩ সদস্যের এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন রোববার প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।

এ কমিশন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে।

তবে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বিষয়টি জাতীয় বেতন কমিশনের বাইরে রাখা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে।

বর্তমানে ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০টি বেতন গ্রেড রয়েছে। দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পে স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা পান।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেতন কাঠামো ঘোষণার দাবি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। ২০২৪ সালের অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।


অনেকেই আশা করছিলেন, জুন মাসে ঘোষিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসতে পারে।


তবে শেষ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতার বদলে বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।


কমিশনের সদস্য কারা, কাজ কী


মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সমন্বয়ের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে কমিশনের কাছে সুস্পষ্ট পরামর্শ চাওয়া হয়েছে, যেখানে কর্মচারীদের পরিবারের সদস্য ছয়জন ধরে আর্থিক ব্যয় হিসাব করতে বলা হয়েছে।

কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য


সাবেক সচিব মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মোসলেম উদ্দীন ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অথবা সচিব এই বেতন কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে পূর্ণকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্য

সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব জিশান আরা আরাফুন্নেসা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাকছুদুর রহমান সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম ভূঁঞায়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক।

এছাড়া খণ্ডকালীন হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনোনীত একজন প্রতিনিধি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি, অর্থ বিভাগের (প্রবিধি বাস্তবায়ন আইন ও রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বিভাগ) একজন অতিরিক্ত সচিব এবং বাস্তবায়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব।

কমিশন প্রয়োজনে খণ্ডকালীন সদস্য যুক্ত করতে পারবে।

কার্যপরিধি

>> সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, সরকারি মজুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্ণিত (শ্রমিক ব্যতীত) বিদ্যমান বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনাপূর্বক কমিশন সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে।

(ক) কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ;

খ) বিশেষায়িত চাকরিধারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ;

(গ) বেতন-ভাতার উপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো স্থিরীকরণ;

(ঘ) বেতন-বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধা, যেমন – বাড়িভাড়া/চিকিৎসা/যাতায়াত/আপ্যায়ন/প্রেষণ কার্যভার/মহার্ঘ/উৎসব এবং শ্রান্তিবিনোদন ইত্যাদি ভাতা নিরূপণ;

(ঙ) মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ;


(চ) যথোপযুক্ত সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধাদি নির্ধারণ;

(ছ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান নিরূপণ/মূল্যায়নপূর্বক বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন;

(জ) সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকারসমূহ আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ;

(ঝ) উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষাক্রমে কোনো অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তা দূরীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন।

সুপারিশ প্রণয়নকালে কমিশন যা বিবেচনা করবে

(ক) পিতা-মাতাসহ অনূর্ধ্ব ছয়জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয়;

(খ) অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়;

(গ) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা;

(ঘ) সংশ্লিষ্ট সংস্থা/প্রতিষ্ঠানগুলো আয়-ব্যয়ের অবস্থা;

(ঙ) দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ জোগান ও ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়;

(চ) জনপ্রশাসনে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং


(ছ) কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি করে সেবার মান উন্নয়ন।


আরও পড়ুন


সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়াতে নতুন পে কমিশন

সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮২৫০, সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *