Google Alert – পার্বত্য চট্টগ্রাম
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্তে আমরা উদ্বিগ্ন। গাজায় ও মায়ানমারে নির্বিচারে মুসলিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে সেখানে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা দেখিনি। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে ৭ হাজার ১৮৮ জন মানুষকে খুন ও গুম করা হয়েছে। তখন ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার প্রয়োজন হয়নি কেন? শাপলা চত্বরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে ১৪শ’ মানুষ হত্যা এবং ২০ হাজার মানুষকে আহত পঙ্গু করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। শাপলা হত্যাকা-ের শিকার ব্যক্তিদের গণকবর দেয়া হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার সন্তানদের খোজার সুযোগ পর্যন্ত পাননি মা-বাপ। শাপলা হত্যাকা-ের সঠিক পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি। তখন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তাতে জাতিসংঘ কমিশনের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নীতিনির্ধারণী অনেক বিষয়ে ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন অফিস স্থাপনের মাধ্যমে এ দেশের সামাজিক মূল্যবোধ বিরোধী এল জি বি টি কিউসহ বিভিন্ন মূল্যবোধ বিরোধী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি ধ্বংসের আশঙ্কা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম রাষ্ট্রের অখন্ডতা রক্ষায় সদাজাগ্রত থাকতে হবে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা অফিস স্থাপন: করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজেদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মুন্সী আব্দুল মান্নান, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক নুর, মাওলানা সারাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মুফতি মো. ফখরুল ইসলাম, মাওলানা মীর ইদরিস নদভী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী।
বিএনপি শীর্ষ নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসের ঢাকায় নিযুক্ত বিতর্কিত ব্যক্তির নিয়োগের ব্যাপারে বহু আপত্তি রয়েছে। এসব বিতর্কিত ব্যক্তিকে ঢাকায় নিয়োগের বিষয়টি দেশবাসী মেনে নিবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো মতামত না নিয়ে জাতিসংঘের অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত মোটেই উচিৎ হয়নি। আমি হেফাজতে ইসলামের আজকের আয়োজনের মূল চেতনার সাথে একমত। আমি সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাবার মিশন নিয়েই ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, দেশবাসী জাতিসংগের অমানবিক কমিশনের অফিস মেনে নিবে না। তিনি বলেন, আপনাদের সময় শেষ ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে বিবেচনা করবে জাতিসংঘের মানবাধিকারের অফিসের প্রয়োজন আছে কি না।
দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মুন্সী আব্দুল মান্নান বলেন, ঘুণ্যতম স্বৈরাচারের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে মানবাধিকার অনেক বেশি সংহত ও নিরাপদ। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। গাজা ফিলিস্তিনে, মায়ানমারে মুসলিম হত্যাকা-ে জাতিসংঘ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দেশে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কোথায় ছিল। যেসব দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে জাতিসংঘ তা’ ঠেকাতে পারেনি। জাতিসংঘ কার্যত পশ্চিমা বিশ্বের ক্রীড়নক বা হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। জনগণ মানবাধিকারের নামে ভিনদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেবে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা না করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার অনুমতি দিয়ে চরম অন্যায় করেছে। অবিলম্বে মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ইসলামের চেয়ে মানবাধিকার কেউ বেশি দেখাতে পারেনি। ভারত থেকে পুশ ইন করা হচ্ছে। ভারত পতিত ফ্যাসিস্টদের পুর্নবাসনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে। ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের ট্রেনিং দিচ্ছে। ওদের কাছে ইসরাইলি পিস্তল পাওয়া যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়া এদেশে কোনো মানবাধিকারের অফিস জনগণ মেনে নিবে না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে সরকার যদি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি খোলসা করে তাহলে হেফাজত তাতে স্বাগত জানাবে। তবে দেশ ও ইসলামের স্বার্থে আমরা কারও দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পাবরো না। এি বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে হেফাজত কুন্ঠিত হবে না।