BD-JOURNAL
দগ্ধদের অবস্থা অপরিবর্তিত, বার্নে এখনও ৩৩ জন ভর্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক :: own-reporter 2025-07-29
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে দগ্ধ তিনজন গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে রয়েছে। একজন লাইফ সাপোর্টে আছে। তাদের চাইতে একটু কম গুরুতর অর্থাৎ সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে রয়েছে ৮ জন। আর ১৯ জন কেবিনে ও বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ড ভর্তি রয়েছে।
দগ্ধ সব রোগীকে ফিজিক্যাল ইনজুরির চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ২টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
পরিচালক বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের মধ্যে ১৯ জন কেবিনে ও বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ড ভর্তি রয়েছে। তবে আগের দিন থেকে এখন পর্যন্ত তাদের সবার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার কাউকে ছুটি দেওয়া হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে কয়েকজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। দগ্ধ সকল রোগীকে ফিজিক্যাল ইনজুরির চিকিৎসার সাথে মানসিক চিকিৎসার গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এবিষয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যাদেরকে ছুটি দেয়া হচ্ছে তারা পরবর্তীতে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য আসবে। তাদের পরবর্তীতে অপারেশনও লাগতে পারে।
এদিকে, দুর্ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মঙ্গলবার ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বিশেষ কমিটি গঠন, আউটডোর সেল চালু, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে বেড সংরক্ষণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আউটরিচ সেবা চালু এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (ইঅচ) এর সঙ্গে সমন্বয়ে হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে।
হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে: সকাল ১০টা – দুপুর ২টা: ০১৮৩৫১৫৪৩৪১ / ০১৮৩৫১৫৫৫২১, দুপুর ২টা – বিকাল ৬টা: ০১৮৩৫১৫৩২৬২ / ০১৮৩৫১৫৪৩৪০, বিকাল ৬টা – রাত ১০টা: ০১৮৩৫১৫৩০০৫ / ০১৮৩৫১৫৬২৬২।
এছাড়া ২৪ ঘণ্টা জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজন রোগী ভর্তি হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে সোমবার শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে মাইলস্টোনে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা সচিব,স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকগণ, মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ, সাইকিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় এবং ২৯ জুলাই একটি খসড়া কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বুধবার চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থী মানসিক ট্রমায় ভুগছে, তাদের কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে আসতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। উদ্দেশ্য, এই শিক্ষার্থীদের মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনা। পড়ালেখায় মনোযোগী করা। আবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা কাছ থেকে দেখা অভিভাবকেরাও কাউন্সেলিংয়ে অংশ নেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত ২১ জুলাই এই ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিফতর থেকে পাঠানো তথ্য বলছে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৫ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ১১ জন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে একজন ভর্তি রয়েছেন।
ভয়াবহ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাইলস্টোনের এই ক্যাম্পাসে পৃথক তিনটি ভবনে কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। বিমানবাহিনী ও ব্র্যাকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সেবা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী স্থাপিত অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রমও চলছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেবস্মিতা রায়কে নিয়ে কাউন্সেলিং সেন্টারে এসেছিলেন বাবা মনোজ রায়।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের দিন তার মেয়ে ক্যাম্পাসে ছিল। চোখের সামনেই মর্মান্তিক এই ঘটনা দেখে সে ট্রমায় ভুগছে। এখন মেঘের গর্জন শুনলেও ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। তাই তাকে স্বাভাবিক করতে কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে এসেছেন।
কাউন্সেলিং নেওয়ার পর দেবস্মিতা রায় জানায়, ভয় না পেতে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘ডিপ ব্রেদিং’-এর একটি ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী অভ্র সাধু এখন পর্যন্ত কথা বলতে পারছে না বলে জানান মা সুস্মিতা সাধু। কাউন্সেলিং সেন্টারের সামনে অপেক্ষা করার সময় তিনি বলেন, সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন।
অভিভাবক জেসমিন বেগম বললেন, তার সন্তান ভীষণ আতঙ্কিত। সে বলেছে, ক্যাম্পাসের ভেতরে সে আর ঢুকবে না। তাই তিনি নিজে পরিস্থিতি দেখার জন্য ঘটনাস্থলে এসেছেন।
ঘটনার দিন ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, এভাবে সন্তানদের মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। সেদিনের হৃদয়বিদারক ঘটনা মাথা থেকে বাদ দিতে চেষ্টা করছেন তিনি।
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। তবে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকজন শিক্ষক ক্যাম্পাসে দেখা গেছে।
স্কুল শাখার গণিতের শিক্ষক আবু জাফর বলেন, অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় সহপাঠীদের হারিয়ে এখনও ব্যথাতুর হয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার ওয়ালিউল্লাহ খান বলেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে আজ কাউন্সেলিং সেন্টারে সেবা নিতে দেখা গেছে। বিমানবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের সেবা দিচ্ছেন।
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখতে এখনও মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে আসছেন অনেকে।ক্যাম্পাসে এসে অনেক শিক্ষার্থী পরিচিত বন্ধুদের দেখা পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর ডান দিকের একতলা ভবনের একটি কক্ষে আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ রাখা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাগে সাদা কাগজে শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। অনেকে এসে সেসব ব্যাগ দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমবিএস
(function(i,s,o,g,r,a,m){i[‘GoogleAnalyticsObject’]=r;i[r]=i[r]||function(){
(i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o),
m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m)
})(window,document,’script’,’https://www.google-analytics.com/analytics.js’,’ga’);
ga(‘create’, ‘UA-103843996-1’, ‘auto’);
ga(‘send’, ‘pageview’);
(function(i,s,o,g,r,a,m){i[‘GoogleAnalyticsObject’]=r;i[r]=i[r]||function(){
(i[r].q=i[r].q||[]).push(arguments)},i[r].l=1*new Date();a=s.createElement(o),
m=s.getElementsByTagName(o)[0];a.async=1;a.src=g;m.parentNode.insertBefore(a,m)
})(window,document,’script’,’https://www.google-analytics.com/analytics.js’,’ga’);
ga(‘create’, ‘UA-115090629-1’, ‘auto’);
ga(‘send’, ‘pageview’);
_atrk_opts = { atrk_acct:’lHnTq1NErb205V’, domain:’bd-journal.com’,dynamic: true};
(function() { var as = document.createElement(‘script’); as.type=”text/javascript”; as.async = true; as.src=”https://certify-js.alexametrics.com/atrk.js”; var s = document.getElementsByTagName(‘script’)[0];s.parentNode.insertBefore(as, s); })();