Google Alert – আর্মি
যশোরের শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রায় এক বছর আগের এ ঘটনায় অভয়নগর থানা ও আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন ঘটনার শিকার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন।
অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন এই চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম।
ঘটনার শিকার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী।
অভিযোগকারী আসমা খাতুন জানান, গতবছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে কৌশলে সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান। টিপুকে ওই অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান জনি মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এরপর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) করেন। টাকা পেয়ে ওইদিন ব্যবসায়ী টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই ঘটনার ১৬ দিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ব্যবসায়ী টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তার গতিরোধ করেন। এরপর বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিপুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, টিপুকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির কনা ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে আবারও মারধর করেন।
পরে বুকসমান গর্ত খুঁড়ে ব্যবসায়ী টিপুকে বালু চাপা দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। এসময় টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) করেন। এসময় মফিজ আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন। পাশাপাশি জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের এ ঘটনায় বুধবার (৩০ জুলাই) অভয়নগর থানা ও বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) অভয়নগর আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন।
এই অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর গোটা যশোরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পৌর বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনের ফোনে বন্ধ হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে এখন আমাদের কেউ না।’
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই। তার কর্মকাণ্ডে আমাদের দল কোনো দায় নেবে না।
অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পরই যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিলন রহমান/এসআর/এএসএম