চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা

CHT NEWS


সোহেল চাকমা


সোহেল চাকমা

২০১০ সালের শেষের দিকে এবং ২০১১
সালের প্রথমার্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ ও
বিদ্রোহের একটি ঢেউ ছিল আরব বসন্ত। তিউনিসিয়ায় এক ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি দেশের
দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিভস্ম হয়ে
আত্মাহুতি দেন। তার আত্মত্যাগ তিউনিসিয়ার জনগণকে বিক্ষোভে উদ্বুদ্ধ করে। জনগণের বিক্ষোভে
বিদ্রোহে পতন ঘটে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক জাইন আল-আবিদিন বিন আলী সরকারের। মূলত দীর্ঘদিনের
রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বেকারত্বই ছিল আরব বসন্তের মূল কারণ। যেখানে
তিউনিসিয়ার তরুণ সমাজ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায়ও ঘটে এক গণঅভ্যুত্থান। রাষ্ট্রপতি গোঠাভয় রাজাপক্ষের সরকারের
বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ পরিণত হয় সরকার
পতনের আন্দোলনে। বিশেষ করে অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা, তীব্র মুদ্রাস্ফীতি, দৈনিক বিদ্যুৎ
বিভ্রাট, জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র অভাব, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাসহ শ্রীলঙ্কার জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়লে সাধারণ জনতার বিক্ষোভ
বিদ্রোহে পরিণত হয়। পতন ঘটে গোঠাভয় রাজাপক্ষ সরকারের। শ্রীলঙ্কার এই গণঅভ্যুত্থান পুরো
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যার প্রভাব সেদিন বাংলাদেশের মাটিতেও
আছড়ে পড়েছিল। ফলশ্রুতিতে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে সংঘটিত
হয়েছে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক এক সফল গণঅভ্যুত্থান। যেখানে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষিত বিক্ষুদ্ধ
তরুণ ছাত্রসমাজ।

নব দিগন্তে আশা জাগানো আপামর জনগণের
গণপ্রচেষ্টার নাম গণঅভ্যুত্থান।  বাংলাদেশের
ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতার একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের
ফসল। দলমত নির্বিশেষে ফ্যাসিস্টবিরোধী যূথবদ্ধ সংগ্রামের কাছে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য
হয় দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা স্বৈরাচারী হাসিনা। ৫ই আগস্ট
লং মার্চ টু ঢাকা পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে পতন ঘটে হাসিনার আওয়ামী সরকারের। গণমানুষের
ভয়াবহ দাবানলের অগ্নিস্তুপে ভস্ম হওয়ার পূর্বেই প্রাণ রক্ষার জন্য দলের নেতাকর্মীদের
বিপদে ফেলে রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে সফল
হয় ছাত্র-জনতার জীবন বাজি রাখার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে স্বতঃস্ফুর্ত
অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী
একমাত্র রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

৫ জুন ২০২৪ হাইকোর্ট ২০১৮ সালের
৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার এক প্রজ্ঞাপনে দেশের স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল তা অবৈধ ঘোষণা করে।
মূলত তখন থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরে তা রূপ নেয় সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে।
১ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট ৩৬ দিন দেশ কাঁপানো অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে।

৪ জুলাই ’২৪ আপিল বিভাগ ৫ জুনের
ঘোষিত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন
আরো জোরদার হয় এবং এ আন্দোলন শেষ হয় ৯ দফা থেকে ১ দফায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের
মধ্য দিয়ে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কোটা সংস্কার
আন্দোলনের শুরু থেকে পাহাড় ও সমতলের অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া জাতিসত্তাদের জন্য ১ম ও ২য়
শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৫% কোটা পুনর্বহাল রাখার দাবি জানিয়েছিল। ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর
৫% কোটা পুনর্বহালের দাবীতে চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ১১
অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ
ও ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছিল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। গণঅভ্যুত্থানের
সময়েও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে এবং জাতিসত্তাসমূহের কোটা পুনর্বহাল
রাখার দাবি অব্যাহত রেখে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে
যখন কোটা সংস্কার নিয়ে তুমুল আন্দোলন শুরু হয় তখন পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আন্দোলন
দমনে অনুগত সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার তথা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও নিজেদের
দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে  ছাত্র-জনতার ওপর সহিংস
হামলা চালায়। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হলে আন্দোলনের গতিপথ বদলে
যায়। রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট
শাটডাউন, রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ, মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচীগুলো দেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতাকে
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ধাবিত করে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে পিসিপি অংশগ্রহণ করেছিল:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় না
থাকলেও দেশের মানুষের এবং জাতির ক্রান্তিলগ্নে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের প্রতিনিধি হিসেবে
সাধ্য মতো নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। আওয়ামীলীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিক
দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে পাহাড়-সমতলের
বিভিন্ন স্থানে দেশের প্রগতিশীল ছাত্র ও নারী সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন,
শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক-লেখক-বুদ্ধিজীবীসহ সকল পেশাজীবী মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
রাজপথে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল।

২০২৪ এর জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা বৈষম্য
বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে প্রথমে ‘সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা’
সহ ৪দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের সূচনা করে। ফলে তাদের এই দাবি নিয়ে পাহাড়-সমতলে বাঙালি
ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা  বিশেষ
করে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তা সমর্থন দেয়নি। বলতে গেলে এই নিয়ে অনেকের
মধ্যে ধোঁয়াশাও ছিল।  সেজন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
শুরুতে সাংগঠনিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ৯ জুলাই ২০২৪ দেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসত্তাসমূহের
জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে। এর পূর্বে ৭ জুলাই
‘কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার’ দাবিসহ বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং  নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা
ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সহ ৬ ছাত্র সংগঠনের লড়াকু জোট
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

১০ জুলাই ২০২৪, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র
আন্দোলন ‘সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি
সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। ১৪ জুলাই ২৪, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ আইন
বাতিল করার প্রতিবাদে এবং সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করে সচেতন পাহাড়ি শিক্ষার্থীবৃন্দ। মশাল মিছিলে অংশ নিয়ে
বক্তব্য রাখে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধিত্বকারী চবির নেতৃবৃন্দ। ১৬ জুলাই ২০২৪
পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের
আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে
পিসিপি’র পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান করা হয়।

রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যা ও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করে পিসিপি, ১৭ জুলাই ২০২৪

পরের দিন ১৭ই জুলাই ২০২৪, সারাদেশে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নৃসংশভাবে হামলার প্রতিবাদে ও জাতিসত্তাসমূহের ৫% কোটা
পুনর্বহালের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি
অংশগ্রহণ করে। একই দিনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ ১৮ জুলাই ’২৪ বৈষম্য বিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি সফল করতে
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন। ১৯ জুলাই ২০২৪, ‘আন্দোলন দমনের নামে
সারাদেশে সহিংসতার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রুখে দাঁড়াও’ এই আহ্বানে এবং সরকারি চাকরিতে
কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা ও গুলি চালিয়ে ৩০ জনের অধিক ছাত্র-সাংবাদিক
ও পথচারীদের হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ,
২১ জুলাই ২০২৪ একই দাবীতে পানছড়িতে কালো পতাকা মিছিল করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। ২৩ জুলাই
’২৪ কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাখান করে ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৫% কোটা
বহাল, সারাদেশে ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি
এবং ২৪ জুলাই রাঙামাটি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৬ জুলাই ২০২৪ কারফিউ ভেঙ্গে ঢাকা
প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছাত্র জনতা হত্যার প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক
সমাবেশ ও গানের মিছিলে পিসিপি অংশগ্রহণ করেছিল। সেদিন রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে
ব্যানারে লেখা হয় ‘স্বজন হারানো শ্বশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই’। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ
মূহুর্তে এই সমাবেশ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ২৭ জুলাই’২৪ শিক্ষার্থীদের
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের নির্বিচারে হত্যা, হামলা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ছাত্র
জনতার পাশে নারী সমাজের উদ্যোগে নারী সমাবেশে এবং ২৮ জুলাই’২৪ কারফিউ ভেঙ্গে, সেনা-পুলিশের
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ৪ দফা দাবিতে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের
সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট কালো পতাকা মিছিল করে। 
২ আগস্ট ’২৪ গণগ্রেফতার বন্ধ, জুলাই
গণহত্যার বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য
শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যার দায়ে হাসিনা সরকারে পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব-শহীদ
মিনারে দ্রোহযাত্রায় পিসিপি’র নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। ৩রা আগস্ট
চট্টগ্রাম নগর নিউমার্কেট সংলগ্ন চত্ত্বরে ‘হত্যার রাজনীতি গণতন্ত্রের নমূনা হতে পারে
না, হত্যাকারীরা গদি ছাড়ো গণহত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত চাই’, ‘পাহাড় সমতলে লড়াই হবে
সমানতালে’, ‘সমতল থেকে পাহাড় এবার মুক্তি সবার’ ইত্যাদি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা-কর্মীরা হাজার হাজার ছাত্র-জনতার
সাথে একাত্ম হয়ে অভ্যুত্থানের সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী জনতার আন্দোলনে পিসিপি নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ, ৩ আগস্ট ২০২৪।

৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের
পতন হয়। এই দিন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ ‘পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার কর’
সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার সঙ্গে গণভবন ও সংসদ ভবনে প্রবেশ করে
গণঅভ্যুত্থান সফল কর্মসূচীতে অংশ নেন। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
(পিসিপি)-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারকে উৎখাত করা অভ্যুত্থানকারী
ছাত্র-জনতাকে বিপ্লবী অভিবাদন জানানো হয়। বিবৃতিতে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে বিপ্লবী
অভিবাদন জানিয়ে পিসিপি’র তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল
ত্রিপুরা বলেন, সারা দেশে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার
উৎখাত হয়েছে। বীরোচিত জনগণ গণভবন দখল করে বিজয় উল্লাস করছে। এই বিজয় স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা,
দুর্নীতি, অবিচার ও অপকর্মের বিরুদ্ধে বিজয়। এই বিজয়কে অব্যাহত রেখে পাহাড়-সমতলে প্রকৃত
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে। এছাড়াও পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ পাহাড়ে আলোচিত
কল্পনা চাকমা অপহরণ, শহীদ বিপুল, মিঠুন চাকমা হত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ড ও বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলন দমনে সংঘটিত গণহত্যার বিচার এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করে
দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক কারাগারে আটক থাকা পিসিপি নেতা কুনেন্টু চাকমাসহ সারা দেশে রাজবন্দীদের
অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানান।

৫ আগস্ট ২০২৪, গণঅভ্যুত্থানের দিন শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার গণভবন অভিমুখী মিছিলে অংশগ্রহণ করে পিসিপি’র নেতাকর্মীরা। এ দিনই শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। 


অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ও পাহাড়িদের প্রত্যাশা:
’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান কিংবা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দেশের আপামর ছাত্র-জনতার
এমন গণজোয়ার পুরো বিশ্বের বুকে এক ঐতিহাসিক মূহুর্ত তৈরী করেছিল। সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামী
মূহুর্তকে ধারণ করে মানুষের আশা-প্রত্যাশার জায়গাটাও ছিল বিশাল। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের
ভূমিকা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদরেও প্রত্যাশা ছিল গণআকাঙ্ক্ষার
প্রতিফলন। দেশ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত-নির্যাতিত পাহাড়ি
জনগণের শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষাই ছিল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ।
কিন্তু অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে
পাহাড়িদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।

৮ই আগস্ট ’২৪, ইউনুস সরকারের নেতৃত্বে
গঠিত হয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। আগামীকাল ৫ই আগস্ট ২০২৫, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ইন্টেরিম
সরকার গঠনের ১ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা নিয়ে দেশের আপামর
ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন তার কোনটাই ইন্টেরিম সরকার প্রতিফলন ঘটাতে
পারেনি। জনজীবনের নিরাপত্তা জোরদার, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, বিচারব্যবস্থা,
কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং জাতিসত্তাসমূহের অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষা
দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত ইন্টেরিম সরকার। বলাবাহুল্য, গণঅভ্যুত্থানের
পরে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দিঘীনালা ও রাঙামাটিতে সেনা-সেটলার কর্তৃক ভয়াবহ
জাতিগত সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটে। পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় সেনামদদপুষ্ঠ
সেটলার বাঙালিরা। রাঙামাটিতে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনিক চাকমাকে, খাগড়াছড়িতে
রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা’কে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পরবর্তীতে ইন্টেরিম
সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি টিম রাঙামাটি
ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু
তদন্ত কমিটি গঠন হলেও আজ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ
করেনি তদন্ত কমিটি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষী ও হত্যাকারীদের কাউকে গ্রেফতার ও
বিচার করা হয়নি।

৫ মে ’২৪, বান্দরবানের থানচিতে এক
খিয়াঙ জনগোষ্ঠীর নারীকে ধর্ষণের পর নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার
তো দূরুহ ব্যাপার সেই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতেও দেখা যায়নি। রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর
কথিত যৌথ অভিযানে বম জনগোষ্ঠীর ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ সকলকে
গণহারে গ্রেফতার করে দেড় বছরের অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের পরও মুক্তি মেলেনি বম জনগোষ্ঠীর। এর মধ্যে কারাঅভ্যন্তরেই বম জনগোষ্টীর
তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর তদন্ত কিংবা ঘটনার রহস্য এখনো উদঘাটন করা হয়নি। যা একপ্রকার
রাষ্ট্রেরই কাঠামোগত হত্যাকান্ড।

গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ি ভাইবোনছড়ায় ৬জন
সেটলার বাঙালি কর্তৃক ৮ম শ্রেণীর এক ত্রিপুরা স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী
শিক্ষার্থী লজ্জায় ও ভয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং বিষপানে আত্মহত্যার
চেষ্টা করে। এরপর ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। গণধর্ষণকারী সকলেই পুনর্বাসিত সেটলার
ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে একাধিক সূত্রে জানা
গেছে। সহপাঠী ধর্ষণের প্রতিবাদে ভাইবোনছড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশের
আয়োজন করেছিল। সমাবেশ বানচাল করতে শিক্ষার্থী ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ওপর সেনাবাহিনী
নগ্ন হামলা চালায়। শুধুমাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে ৪ জন ধর্ষককে
গ্রেফতার করা হলেও দুইজনকে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
নিশ্চিত করার বদলে পুলিশ প্রশাসন নানা অজুহাত দেখিয়ে এখনো পর্যন্ত ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর
মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ করতে দেয়নি। প্রশাসনের এমন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ স্পষ্টই জাতিগত
নিপীড়নের চিত্রকে তুলে ধরে।

পাহাড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড
ও পাহাড়ি নারী ধর্ষণ করা এখন এককথায় সেনা-সেটলারদের দুধ কলা ভাত। রাষ্ট্রের দ্বিচারিতা
ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী আধিপত্যবাদী শাসনের চিন্তা পাহাড়ে ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডকে
কাঠামোগত স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে পাহাড়ে ধর্ষণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বারবার সংঘটিত
হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশের রাজনীতিতে
কিছুটা পটপরিবর্তন ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্বের মতোই সেনাশাসনাধীন রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেসি
ক্ষমতাকে রাষ্ট্রীয় ম্যান্ডেট হিসেবে ব্যবহার করে পাহাড়িদের ওপর সেনা-শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন
বরঞ্চ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মূলত গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জাতিসত্তাসমূহের অংশীদারিত্বকে
খারিজ করে দেয়ার সামিল। 

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে ফ্যাসিস্টের
পতন ঘটেছে ঠিকই কিন্তু উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেনা-শাসকগোষ্ঠীর যাঁতাকলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান
সার্বজনীন রুপ পরিগ্রহ করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পাহাড়িদের জনজীবনে কোন
সুফল বয়ে আনেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার হয়নি, আশির দশকে রাষ্ট্রীয়
উদ্যোগে সমতল থেকে পুনর্ববাসিত সেটলার সমস্যার সমাধান হয়নি, পাহাড়িদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
হয়নি। জুলাইয়ের চেতনায় প্রকম্পিত রাজপথের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই পার্বত্য চট্টগ্রামে
একের পর ধর্ষণ, হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী ভাড়াতে ও মদদপুষ্ঠ বাহিনী দিয়ে
পার্বত্য চট্টগ্রামে জিইয়ে রেখেছে প্রক্সি যুদ্ধ। অথচ সেদিকে ইন্টেরিম সরকারের কোন
ভ্রুক্ষেপ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ স্বতন্ত্রতা নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে
চায়, সেনাশাসন ও সেটলারমুক্ত পাহাড় চায়। তার প্রমাণ পাহাড়ের হাজার হাজার তরুণ ছাত্র-জনতা
স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করার মধ্যে দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম
সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের প্রেক্ষাপট তৈরী হলেও তা ইন্টেরিম সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
ছিল না। ফলে গণঅভ্যুত্থানের জল বহুদূর গড়ালেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ফ্যাসিস্টের উচ্ছিষ্টভোগী
তীর্থস্থানের মতো করেই রাখা হয়েছে। আবহমান কাল থেকেই এভাবে পাহাড়িদের সঙ্গে বারবার
প্রতারণা করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখোশ পড়ে সেনা-শাসকগোষ্ঠী তথা ইন্টেরিম সরকারও
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতারণা করছে। যা অবিবেচনা প্রসূত ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত
১৩টির অধিক জাতিসত্তাদের ঔপনিবেশিক কায়দায় দমন-পীড়ন চালানো কিংবা কর্তৃত্ববাদী শাসন
জারী রাখার ষড়যন্ত্র।

প্রকৃত অর্থে অভ্যুত্থানের চেতনা
ধারণ করে দেশের গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতার গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যাকে দেশের জাতীয় সমস্যা
হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বিশেষ ‘স্বায়ত্তশাসিত’
অঞ্চল ঘোষণা করে এ জাতীয় সমস্যাকে সমাধান করতে হবে। অন্যথায় শুধুমাত্র গণঅভ্যুত্থানের
কথার ফুলঝুরি দিয়ে দেশে গণমানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
বস্তুত, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকা ও অংশীদারিত্বকে সামনে রেখে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
ইন্টেরিম সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা করতেই পারে!

* সোহেল চাকমা, এজিএস, পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটি।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *