নাশকতা প্রশিক্ষণের অভিযোগে সেনা কর্মকর্তা ও স্ত্রী, রাজনৈতিক যোগসূত্রে জড়িত থাকার আশঙ্কা

Google Alert – সেনা

আওয়ার টাইমস নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর বসুন্ধরায় একটি কনভেনশন সেন্টারে গোপনে প্রশিক্ষণ চালানো, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং ক্ষমতায় থাকা দলীয় কর্মীদের সশস্ত্র সংগঠনের অভিযোগে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদেকুল হক ও তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পুলিশের দাবি, এই দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা।

তদন্তে জানা গেছে, মেজর সাদেক সেনাবাহিনীর ৭৪তম বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং ২০২৩ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। পরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হারুনের কন্যা সুমাইয়াকে বিয়ে করেন। জানা যায়, জাহাঙ্গীর হারুন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই সম্পর্কের সুবাদে মেজর সাদেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পান।

গোপন অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ ও ক্যাডার প্রস্তুতি

পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, ‘সিগন্যাল’ নামের এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করে তারা একটি কোডনির্ভর গ্রুপ গঠন করেন, যাতে প্রায় ২০০০ সদস্য যুক্ত হয়। সদস্যদের প্রত্যেককে একটি করে কোড নম্বর দেওয়া হয়, এবং তাদের মাধ্যমে চলত অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, নির্দেশনা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম। এই দম্পতির বাসায় নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সাবেক কর্মীরা আসা-যাওয়া করতেন।

গত ৮ জুলাই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে কে বি কনভেনশন সেন্টারে গোপন বৈঠক ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় ৪৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। এখানে অনলাইনে গুজব ছড়ানো, সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গঠন, গোপন বার্তা আদান-প্রদান এবং অস্ত্র সংগ্রহের পদ্ধতি শেখানো হয়।

গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ ইতিমধ্যে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রশিক্ষণের স্থান, সংগঠনের ধরন এবং সদস্যদের পরিচয় বের করতে তারা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পুলিশ আরও দাবি করেছে, মেজর সাদেক সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকলেও তাকে নিজেদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাইলে এখনো সাড়া মেলেনি।

এছাড়াও জানা গেছে, মেজর সাদেক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও বরগুনা থেকে আসা বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তারা বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনায় সহায়তা করেছেন।

রাজনৈতিক ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড প্রশ্নের মুখে

মেজর সাদেকের পরিবার রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বলে দাবি করা হয়েছে। তার মামা, চাচা এবং স্ত্রী সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফলে একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল, যেটির মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু মামলাটি বেসামরিক আদালতে বিচারাধীন এবং পুলিশ তদন্ত করছে, তাই সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে মেজর সাদেককে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করে তদন্তকারীদের হস্তান্তর করা উচিত।

উপসংহার

এই ঘটনায় সরকারের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত এখনও চলমান এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংবেদনশীলতা, রাজনৈতিক সম্পর্কের অপব্যবহার এবং নিরাপত্তা শৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

cgt

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *