রংপুরে এপিসি থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে পুলিশ

Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছর ৪ আগস্ট আজকের এই দিনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল রংপুর মহানগরী। প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নিলেও পরবর্তীতে ১ দফা দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার ওপর পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর বেপরোয়া দমনপীড়ণও থামাতে পারেনি রংপুরের আন্দোলনকারীদের।

অসহযোগ আন্দোলন বাস্তবায়নে ফুঁসে উঠে রংপুরের ছাত্র-জনতা

সেদিন ‘অসহযোগ আন্দোলন’ বাস্তবায়নে ফুঁসে উঠে রংপুরের ছাত্র-জনতা। বুলেটের জবাব দিতে একাট্টা সবাই। বিক্ষোভ দমাতে তখনও মরিয়া স্বৈরাচার। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে, আইশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীল ক্যাডারদের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে বিভিষীকার শহরে পরিণত হয় রংপুর। রংপুরের বাতাসে বারুদের গন্ধ, টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় টিকে থাকা দায়। সড়কগুলো দেখলে মনে হবে যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ। রংপুর জিলা স্কুল মোড়, সিটি পার্ক মার্কেট চত্বর, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন গ্র্যান্ড হোটল মোড়, শাপলা চত্বর, পুরাতন ট্রাক স্ট্যান্ড, কলেজ রোড চারতলার মোড়, লালবাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়, মডার্ন মোড়, দর্শনা মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা ও ধাপ চেকপোস্ট এলাকা—প্রতিটি পয়েন্টেই একই চিত্র। রাজপথ থেকে আন্দোলনকারীদের হটাতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। নির্বিচারে চালানো হয় গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল। যেন এক যুদ্ধপরিস্থিতি। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা আর গুজবের নগরীতে পরিণত হয় রংপুর।

সারাদিন যা ঘটে

৪ আগস্ট জুলাই ২০২৪; শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক একদিন আগে, বেপরোয়া হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীগুলো। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলার মতো উত্তরের জেলা রংপুরেও এই দিনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন রূপ নেয় অগ্নিশিখায়। এদিন আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটও খারিজ করে দেয়ায় রংপুরে জঙ্গিদমন কায়দায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারতে থাকে বিভিন্ন বাহিনী। এরই মধ্যে ঘোষণা হয়, মার্চ টু ঢাকা। আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে, এক দফা দাবিতে অনঢ় হয় ছাত্র-জনতাসহ দেশের আপামর মানুষ। তা হলো, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সেই দাবিতেই সারাদেশের মতো উত্তরের জেলা রংপুরে শুরু হয় আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি। একই সাথে আরও কঠোর কারফিউ জারি হয় দেশজুড়ে। এদিন আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলো নগরির সিটি বাজার, পায়রা চত্ত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, টাউন হল এলাকা। সকাল থেকে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আন্দোলনে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক আর সাধারণ মানুষের ওপর বৃষ্টির মতো নামতে থাকে গুলি। ওসব এলাকা তখন যেন যুদ্ধক্ষেত্র।

সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের চারজন নিহত

সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা রংপুর নগরীর টাউন হল চত্বরে সমবেত হতে থাকে। অপরদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা নগরীর জাহাজ কোম্পানি এলাকায় অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ সিটিবাজার থেকে শুরু করে জাহাজ কোম্পানি এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষে পিস্তলসহ দেশি অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। দুপুর ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। সেদিন নগরীতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায়সহ চার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মী নিহত হন। নিহত বাকিতিনজন হলেন হারাধন রায়ের ভাগনে শ্যামল রায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য খায়রুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের কর্মী মাসুম হোসেন।

এপিসি থেকে বৃষ্টির মতো গুলি চালায় পুলিশ

ছাত্র জনতার গণ আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর রংপুর হয়ে ওঠে সারা দেশের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। মূলত আবু সাঈদকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সারা দেশের মানুষকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে ধাবিত করেছিল। তবে, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশ আরো বেপরোয়া আচরণ করে। ৪ আগস্ট আন্দোলন দমাতে সাঁজোয়া এপিসি যানে করে সিটি বাজারের সামনে আন্দোলনকারীদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোঁড়েন তৎকালীন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *