jagonews24.com | rss Feed
- সম্প্রতি সীমান্তে গুলিতে নিহতের সংখ্যা কমেছে
- নদীতে মিলছে মরদেহ
- মরদেহে ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন
সময়টা ২০ জুলাই ভোর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জহুরপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ১৬/৫-এর কাছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক হন মোহাম্মদ লালচান (২৫)। পরে তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার ওই মরদেহ নাচোল উপজেলার নেজামপুরে নিজ গ্রামের বাড়িতে সন্ধ্যায় দাফন করেন স্বজনরা।
১ আগস্ট বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা ঘাট এলাকায় পদ্মায় ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় সৈয়বুর নামের একজনের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ। সবগুলো মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।
সবশেষ শনিবার (২ আগস্ট) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদপুর সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যার পর পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের দাবি, সস্তায় গরু বিক্রি করার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের ডেকে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিচ্ছেন ভারতীয় নাগরিকেরা।
‘জন্ম থেকেই দেখে এসেছি সীমান্ত এলাকার মানুষের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অমানবিক নির্যাতন। কাঁটাতারের কাছাকাছি কাউকে পেলেই গুলি করে মারেন তারা। এই এলাকার শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বিএসএফের গুলিতে। কিন্তু সম্প্রতি তাদের হত্যাকাণ্ডের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর কাউকে গুলি করে মারেন না তারা। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যার পর পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের মরদেহ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসের শাসনামলে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। তবে সম্প্রতি নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের কৌশল পরিবর্তন করেছেন তারা।
স্থানীয় ও নিহতদের পরিবারের ভাষ্য, এখন গুলি করে নয় বরং বৈদ্যুতিক শক কিংবা অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যার পর পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের মরদেহ।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের শাহাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জন্ম থেকেই দেখে এসেছি সীমান্ত এলাকার মানুষের ওপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী অমানবিক নির্যাতন। কাঁটাতারের কাছাকাছি কাউকে পেলেই গুলি করে মারেন তারা। এই এলাকার শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বিএসএফের গুলিতে। কিন্তু সম্প্রতি তাদের হত্যাকাণ্ডের কৌশল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর কাউকে গুলি করে মারেন না তারা। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও অ্যাসিডে পুড়িয়ে হত্যার পর পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের মরদেহ।’
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাখের আলী, জোহরপুর টেক, জোহরপুর, ওয়াহেদপুর, ফতেপুর ও রঘুনাথপুর এই পদ্মার চরাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার ভয়ংকর। এসব এলাকায় পদ্মা নদীতে এখন টইটম্বুর পানি। এই পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন নিরীহ জেলেরা।
‘সম্প্রতি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিএসএফ। তবে এখন আর কাউকে গুলি করে মারা হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে মারা হচ্ছে।’
রাকিবুলের ভাষ্য, ‘এখন আর গুলি করে মারছে না বিএসএফ। তারা হত্যাকাণ্ডে কৌশল পরিবর্তন করেছেন। অপরাধ ঢাকতে নির্যাতন করে মৃত্যু নিশ্চিতের পর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বিএসএফের নির্যাতনে নিহত সেলিম রেজার দুলাভাই আজিম উদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার নদীতে মাছ ধরতে যায় সেলিম রেজা। এসময় বিএসএফ তাকেসহ দুজনকে ধরে নিয়ে ভারতে চলে যায়। পরে শনিবার তাদের মরদেহ পদ্মা নদীতে পাওয়া যায়। তাদের শরীরে দেশীয় অস্ত্রের আঘাত আছে।’
আতাউর রহমান নামের আরেকজন স্থানীয় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে আঁতাত করে সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি গরু চোরাকারবারি চক্র। তাদের টার্গেট এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষ। ২০-৩০ হাজার টাকার প্রলোভনে পদ্মা নদী সাঁতরে ভারতে গরু আনতে পাঠানো হয় তাদের। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় চোরাকারবারি ও ভারতীয় নাগরিকেরা।’
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সমির উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিএসএফ। তবে এখন আর কাউকে গুলি করে মারা হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে মারা হচ্ছে।’
তিনি জানান, ভারতীয়দের মুসলিমদের ওপর ক্ষোভ বেশি। হত্যাকাণ্ডের শিকার দুজনের মধ্যে একজনের দাড়ি ছিল। তাকে বেশি নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
পদ্মা থেকে উদ্ধার তিন বাংলাদেশির মরদেহে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র রয়েছে বলে জানান রাজশাহী গোদাগাড়ী জোনের পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুর রহমান।
এ বিষয়ে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহদুম রিংকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘মরদেহে আঘাতের চিহ্ন আছে। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় এগোতে গেলে স্বজনদের অভিযোগ লাগে। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। এমনকী নিহতের স্বজনদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেও সাড়া পাইনি। তাই বিষয়টি নিয়ে আইনি কার্যক্রম করতে পারিনি।’
এসআর/জেআইএম