Google Alert – সামরিক
বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে প্রথমবারের মতো যৌথ মহড়া চালিয়েছে ফিলিপিন্স ও ভারতের নৌবাহিনী। কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন।
রোববার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এই সামরিক মহড়া চীনকে ক্ষুব্ধ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, চীন গোটা দক্ষিণ চীন সাগর এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে এবং ভারত ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে এই অঞ্চল নিয়ে দেশটি আলাদাভাবে বিরোধে জড়িত।
ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল রেমো ব্রাউনার সোমবার বলেছেন, তার দেশের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন) জলসীমায় এ মহড়া চালানো হয়েছে। গত মার্চ মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ মহড়ার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানান তিনি।
ভারতের সঙ্গে ফিলিপিন্সের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চার দিনের সফরে দিল্লি গেছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। তার এই সফরের মাঝেই দক্ষিণ চীন সাগড়ে চলছে ওই যৌথ মহড়া।
এই মহড়া দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার প্রতিচ্ছবি। ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা কারও চাপের কাছে মাথা নত করে না এবং তার মিত্রদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
এই যৌথ মহড়া ভারত-ফিলিপিন্সের বন্ধুত্বকে কেবল শক্তিশালীই করবে না, বরং চীনকে একটি বার্তাও দেবে যে, দেশ দুটি আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চুপ করে বসে থাকবে না।
মহড়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ফিলিপিন্স-এ থাকার কথা জানায় সামরিক সূত্র। ফিলিপিন্সের সামরিক বাহিনীর প্রধান বলেন, মহড়া এখন পর্যন্ত সফল।
চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হইনি। তবে আমরা যেমনটি ধারণা করছিলাম, কেউ আমারেকে পুরো সময় নজরদারিতে রেখেছিল।”
মহড়ায় অংশ নেওয়া যুদ্ধজাহাজের মধ্যে ছিল গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ‘আইএনএস দিল্লি’, ট্যাংকার ‘আইএনএস শক্তি’ এবং করভেট ‘আইএনএস কিল্টান’। ওদিকে, ফিলিপিন্স পাঠায় দুটি ফ্রিগেট, ‘বিআরপি মিগুয়েল মালবার’ ও ‘বিআরপি হোসে রিজাল’।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, অঞ্চল ও জলসীমা নিয়ে বিরোধ সরাসরি জড়িত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে মীমাংষা হওয়া উচিত। এখানে তৃতীয় কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ এলাকা নিজেদের অংশ বলে দাবি করা চীনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইয়ের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ রয়েছে। ফিলিপিন্স এবং চীনের বিরোধের অন্যতম কারণ দক্ষিণ চীন সাগরের সেকেন্ড থমাস শোলে দ্বীপকে কেন্দ্র করে।
তাছাড়া, ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্যর প্রায় ২১ শতাংশই দক্ষিণ চীন সাগরের জলপথ দিয়ে পরিবহন হয়। গত কয়েক বছরে সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সংঘাতও বেড়েছে।
পাশাপাশি, ভারত মহাসাগরেও তৎপরতা বাড়াচ্ছে চীন। চীনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সকে বরাবরই সমর্থন জানি আসছে ভারত।
২০২৩ সালে ভারত ও ফিলিপিন্স দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর স্তরে নিয়ে যাওয়ার আলোচনা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থের কারণে বহুপাক্ষিক বিষয়েও একযোগে কাজ করে আসছে দিল্লি ও ম্যানিলা।