চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে সাবেক সেনাপ্রধানের লাশ উদ্ধার

Google Alert – আর্মি

চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশীদ বীর প্রতীকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ৭৭ বছর বয়সি এই সেনাপ্রধান ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, তিনি স্ট্রোকে মারা গেছেন। সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

হারুন-অর-রশীদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট গ্রামে। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে অস্ট্রেলিয়া বসবাস করেন। তিনি ২০০০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। অবসরে যাওয়ার পর তিনি ডেসটিনি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন।

জানা গেছে, সাবেক সেনাপ্রধান একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এবং ডেসটিনি গ্রুপের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় হাজিরা দিতে রোববার বিকালের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামে আসেন। বিকাল ৪টায় তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি ভিআইপি কক্ষে ওঠেন। ঘণ্টাখানেক পর তিনি ক্লাব থেকে বেরিয়ে যান। রাতে নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় খোশগল্পও করেন। রাত পৌনে ১১টায় তিনি পুনরায় চট্টগ্রাম ক্লাবে ফেরেন। তার কক্ষে প্রবেশ করার আগে তিনি অভ্যর্থনা শাখায় গিয়ে সকালের নাশতার সময় জেনে নেন।

সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ১০টা বেজে গেলেও তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হচ্ছিলেন না। মামলার হাজিরার বিষয়ে কোর্ট থেকেও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। এ অবস্থায় তার আর্মি প্রটোকল অফিসারদের সন্দেহ হয়। পরে ক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে তারা কক্ষের পেছনে কাচের জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের একটি দল এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে তারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম ক্লাবের সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে ফোন করে সাড়া না পেয়ে আমাদের জানান। আমরা পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে উনাকে অচেতন অবস্থায় পাই।

দুপুরে সাবেক এই সেনাপ্রধানের মৃত্যুর খবর শুনে চট্টগ্রাম ক্লাবে আসেন তার ফুফাতো বোন মেরিন সিটি ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নজিমুন্নাহার। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মনে হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু। ডেফিনিটলি এটা স্ট্রোক।

মৃত্যুর আগে অসিয়ত : পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক এই সেনাপ্রধান মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকটি ‘অসিয়ত’ করে গেছেন। সেগুলো হলো-মৃত্যুর পর যেন তার দ্রুত দাফন-কাফন করা হয়, তাকে যেন বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয় এবং মৃত্যুর পর তাকে যেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়া হয়। সাবেক সেনাপ্রধানের ছোট বোনের স্বামী ডা. জহির তার এসব অসিয়তের কথা নিশ্চিত করেন। তাছাড়া তার চক্ষু দান করার কথাও জানান তিনি।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, হারুন-অর-রশীদের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি ধলই ইউনিয়নের হাধুরখিল গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার বাবার প্রতিষ্ঠিত কাটিরহাট মহিলা কলেজে আজ সব ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া তার মৃত্যুতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছে।

হারুনের ফুফাতো বোন ডা. নজিমুন্নাহার বলেন, হারুনের লাশ চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এরপর বাদ এশা হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট হাধুরখিল জামে মসজিদের সামনে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *