Google Alert – পার্বত্য অঞ্চল
পাহাড়ি ঢলের পানি চট্টগ্রাম নগরীর শীতল ঝরনা খাল বেয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল দ্রুত বেগে, তাতেই আশির দশকের ইটের গাঁথুনির সেতুটি ধসে পড়ে।
প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কারের ফলে খাল হয়ে যায় চওড়া। তাতে ঢলের পানি প্রবাহেও বাড়ে গতি। কিন্তু সেতুটি ছিল খালের প্রশস্ততার চেয়ে অর্ধেক। ফলে পানির চাপের ঝুঁকিতে ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের মধ্যে সেটি ধসে পড়ে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে খালের পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভারি বৃষ্টির পর বায়েজিদ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নামছিল এই খাল দিয়ে। কিন্তু সেতুটির ইটের দেয়ালগুলো অনেক পুরনো। সেতুর প্রশস্ততা ৬ মিটার। আর খাল সেতুর চেয়ে দ্বিগুণ চওড়া। সেতু অপ্রশস্ত হওয়ায় ঢলের পানির তোড়ে মাটি সরে সেতুটি ভেঙে পড়ে।”
চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেইট থেকে অক্সিজেনমুখী বায়েজিদ বোস্তামি সড়কে শীতল ঝরনা খালের সেতুর অবস্থান। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়ক ধরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িমুখী যানবাহন চলে। পাশাপাশি ঢাকাগামী অনেক গাড়ি বায়েজিদ লিংক রোডে যেতে এই সড়ক ধরে চলে।
এ ছাড়াও বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানার পণ্যবাহী ভারী যানবাহন এবং আশেপাশের এলাকায় থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত সড়কটি ধরে চলাচল করে। ভোরে ভেঙে পড়ার সময় সড়কে কোনো যানবাহন না থাকায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা মিলেছে।
দুপুরে ভাঙা সেতু দেখতে যাওয়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেতুটি সত্তর দশকের শেষে বা আশির দশকের শুরুতে তৈরি করা। তখন এই সড়ক এত বড় ছিল না। এত বেশি ভারী গাড়িও চলত না।
“এটা ইটের গাঁথুনিতে একটি ফ্ল্যাট স্ল্যাব ব্রিজ। ভেঙে পড়া অংশে দেখলাম সেই স্ল্যাবের উপর প্রায় আড়াই ফুট বিটুমিনের স্তর। বারবার সড়ক উঁচু করায় এমনটা হয়েছে। ফলে ব্রিজের ‘ডেড লোড’ (ওজনের কারণে সৃষ্ট চাপ) বেড়ে গেছে।”
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে খাল চওড়া হওয়ার কথা তুলে ধরে এ প্রকৌশলী বলেন, “খাল পরিষ্কার থাকায় অধিক গতিতে বেশি পানি নামছিল। কিন্তু খালের চেয়ে কম চওড়া হওয়ায় সেতুর অংশে পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছিল না। ফলে পানির ধাক্কায় সেতুর পিলারের নিচের মাটি সরে যায়।”
সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ার পর অপর অংশও খানিকটা দেবে গেছে। সেই অংশটি রক্ষায় কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)। ভারী যানবাহনের চাপ কমাতে নাসিরাবাদ হয়ে একটি বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপাতত অক্সিজেন মোড়মুখী সড়ক দিয়ে শুধু হালকা যানবাহন চলবে।
‘হবে নতুন সেতু ‘
সেতু ধসে পড়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভাঙা সেতু পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, “সেতুটি প্রায় ৫০ বছর পুরনো। আমরা বর্ষার পরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলাম। প্রকল্পটির ব্যয় হতে পারে আট থেকে নয় কোটি টাকা। বর্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করব।
“এটি এক বছরের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। পুরনো সেতুটির জায়গায় ২০ ফুট প্রশস্ত ব্রিজের পরিবর্তে ৬০ ফুট প্রশস্ত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে ভারী যানবাহনের চাপেও সেটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
ইতোমধ্যে নতুন সেতুর জন্য নকশা করার কথা জানিয়ে সিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী বলেন, “বর্ষা মৌসুমের পর নতুন ব্রিজ করার পরিকল্পনা ছিল। ড্রইং ডিজাইনও করা হয়েছে।”
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “খালের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় সেতুটি এমনিতেই নতুন করে করতে হত। কিন্তু তার আগেই সেটি ভেঙে পড়ল। ভাগ্য ভালো যে ভোরে সেখানে মানুষ বা কোন যানবাহন ছিল না।
“নতুন সেতুর কাজ শুরুর আগে সেতু ও সড়কের বাকি অংশটি নিরাপদ করা জরুরি। প্রয়োজনে আইল্যান্ড (সড়ক বিভাজক) ভেঙে সেখানে গাড়ি ঘোরানোর অংশটি প্রশস্ত করা উচিত।”
সেতু ভেঙে যাওয়ার পর যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প রুট ঠিক করে দেওয়ার কথা বলেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, “ডিসি ট্রাফিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই নাসিরাবাদ হয়ে একটি বিকল্প রোড প্রস্তুত করেছেন, যেখানে ভারী যানবাহনগুলো চলবে। অক্সিজেন এলাকা দিয়ে শুধু হালকা যান চলাচল করবে।”