Hill Voice on Facebook
সুহাস চাকমা মানবাধিকার কর্মী নন, তিনি একজন মামলাবাজ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী
হিল ভয়েস, ৭ আগষ্ট ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: সুহাস চাকমা পেশীশক্তি এবং অর্থশক্তি ব্যবহার করে চাকমা সম্প্রদায়ের নেতা এবং ছাত্র নেতাদের চুপ করানোর জন্য একের পর এক মামলা দায়ের করে তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছেন। তিনি ২০২১ সাল থেকে ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় চাকমা সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতে কোর্ট নোটিশসহ কমপক্ষে ১৬টি মামলা দায়ের করেছেন এবং এতে কমপক্ষে শতাধিক চাকমা নেতা মামলার শিকার হয়েছেন। তার টার্গেটের মধ্যে চাকমা ব্যক্তিরা ছিলেন ত্রিপুরার চাকমা সম্প্রদায়ের প্রধান সমাজপতি, এনজিও কর্মী, গ্রাম প্রধান এবং ছাত্র নেতাবৃন্দ।
কোনো ব্যক্তি যদি সুহাস চাকমার বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলেন, তার কোনো ভূমিকা বিষয়ে সমালোচনা করেন, তখনই সুহাস চাকমা তার বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করেন, নতুন লিগেল নোটিস জারি করেন। এভাবে মামলা করার মূল লক্ষ্য হলো, তার বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলার সাহস না পান। তিনি নিজেকে মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু তিনি অন্যের বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের উপর বিশ্বাস করেন না। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তিনি কোনো কিছু বিবেচনা না করে সাথে সাথে মানহানির মামলা দায়ের করে থাকেন। এমনকি মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করে থাকেন।
তার মামলার শিকার অনেক চাকমা নেতা বলেছেন যে, তিনি মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী নন, তিনি একজন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও মামলাবাজ ব্যক্তি। ভারতের ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মিজোরামে কোনো চাকমা রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের চেয়ে একাই সুহাস চাকমা কর্তৃক চাকমা নেতারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে আসছেন।
উদাহরণ স্বরূপ, চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (সিএনসিআই)-এর অরুণাচল প্রদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুণজিৎ চাকমা ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন এবং সুহাস চাকমাকে অনুরোধ করেছিলেন যে, তিনি যেন অরুণাচল প্রদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে না দেন। এই ধরনের অনুরোধ সংবিধানের ১৯(১)(ক) ধারা অনুসারে বাক-স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের আওতায় আইনসিদ্ধ। নিজেকে মানবাধিকার রক্ষাকারী দাবি করা সত্ত্বেও, সুহাস চাকমা তা সহ্য করতে পারেননি এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অরুণজিৎ চাকমাকে আইনি নোটিশ জারি করেন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিপুল অর্থ দাবি করেন।
৮ জুন ২০২২ তারিখে, সুহাস চাকমা অরুণাচল প্রদেশ চাকমা ছাত্র ইউনিয়নের ১২ জন কর্মকর্তা/উপদেষ্টাকে, অর্থাৎ (১) দৃশ্য মুনি চাকমা, (২) নুনেজ চাকমা, (৩) সোনজিৎ চাকমা, (৪) চিকোন চাঁদ চাকমা, (৫) রতন সমীর চাকমা, (৬) অতুল পি চাকমা, (৭) নিপেন চাকমা, (৮) উত্তম চাকমা, (৯) সুপন চাকমা, (১০) সংঘ মিত্র চাকমা, (১১) অজয় সেন চাকমা, (১২) রাকেশ তালুকদারকে ২০২২ সালের মে মাসে অরুণাচল প্রদেশ সফরের সময় সুহাস চাকমার ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) লঙ্ঘন সম্পর্কে দ্য সেন্টিনেল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। পরে, তিনি দিল্লির একটি জেলা আদালতে এই ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে ১৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে একটি দেওয়ানি মামলা (নং ৩৯০৬/২০২২) দায়ের করেন।
২০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে, অরুণাচল প্রদেশের চাকমা গাঁও বুড়া কাউন্সিল (অর্থাৎ গ্রাম পরিষদের সমিতি) এর ৬৮ জনেরও বেশি ঐতিহ্যবাহী গ্রামপ্রধান এবং বিশিষ্ট চাকমা বুদ্ধিজীবীরা সুহাস চাকমাকে একটি যৌথ চিঠি লিখেছিলেন যাতে তাকে অরুণাচল প্রদেশের চাকমা সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে যে, সুহাস ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং এর ফলে সমস্যাটিকে জটিল করে তুলছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, সুহাস চাকমা কেবল বিষয়গুলিকে চাঞ্চল্যকর করে তুলছেন, তথ্য বিকৃত করছেন এবং ভয় তৈরি করছেন এবং সমস্যাগুলিকে জটিল করে তুলছেন যা অরুণাচল প্রদেশের চাকমাদের কোনও উপকার করছে না। এরপর সুহাস চাকমা নিজেই ফেসবুকে চিঠিটি প্রকাশ করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন যে তাকে মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে!
৮ মে ২০২৪ তারিখে সুহাস চাকমা ত্রিপুরা রেজ্য চাকমা সামাজিক পরিষদের শীর্ষ নেতা দেবজান চাকমা, শান্তি বিকাশ চাকমা ও বিভা বসু চাকমার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ জারি করেন। উক্ত নেতারা সুহাস চাকমাকে চাকমা প্রথাগত আইনের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ না করার জন্য বলেছিলেন বলেই সুহাস চাকমা এই আইনী নোটিশ জারি করেন।
এছাড়া সুহাস চাকমা আদালতে ২০ জনেরও বেশি চাকমা নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। সুহাস চাকমা ত্রিপুরা রাজ্যের তিন চাকমা নেতা – দরবাচা চাকমা, ধনুদ ধর চাকমা এবং মঙ্গল ধন চাকমাকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনি দিল্লির আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সুহাস চাকমা প্রায়ই কথায় কথায় মানুষকে মামলা দায়ের করার, কারো সরকারি চাকরি খুইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন। সুহাস চাকমার এসব মামলা দায়ের, হুমকি গঠনমূলক কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ড বা জনগণের মানবাধিকার রক্ষার কোনো কাজ তো নয়ই, বরং চাকমা সমাজের মানুষকে হয়রানি, তাদের মানবাধিকার লংঘন এবং সমাজে অসংহতি ও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা বৈ কিছু নয়।
কে এই সুহাস চাকমা
সুহাস চাকমা ওরফে বোধিমিত্র একজন বাংলাদেশী। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) কর্তৃক সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করা পর্যন্ত তার পিতা রঞ্জন বিকাশ চাকমা জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে রঞ্জন বিকাশ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কয়েক মাস পর তিনি পরিবার নিয়ে আবার ভারতে চলে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সুহাস চাকমা জেএসএসের অর্থায়নে লেখাপড়া করেন। জেএসএসের অর্থ সংকটের মধ্যে জেএসএস তাকে দিল্লীতে লেখাপড়া করান। তিনি বর্তমানে দিল্লীর জনকপুরী এলাকায় বসবাস করেন। সুহাস চাকমার একাধিক এনজিও রয়েছে। এসব এনজিও’র মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক ফান্ড নিয়ে আসেন। এসব ফান্ড নামমাত্র কিছু কাজ করানোর পর অধিকাংশ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। ফলে তিনি বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই এনজিও বা মানবাধিকার কাজের বদৌলতে বিভিন্ন জায়গায় তার কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে সুহাস চাকমা ইউপিডিএফের পেইড এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। ইউপিডিএফ থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। এভাবে তিনি অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। এই অর্থ শক্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করেন এবং হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
#violator #litigious #freedomofspeech #suhaschakma #highlight
হিল ভয়েস, ৭ আগষ্ট ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: সুহাস চাকমা পেশীশক্তি এবং অর্থশক্তি ব্যবহার করে চাকমা সম্প্রদায়ের নেত…..
(Feed generated with FetchRSS)