Google Alert – সামরিক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক মেরামতে সহযোগিতায় দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে অভ্যস্ত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বার্ষিক ৩০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে ওয়াশিংটনের একটি লবিস্ট ফার্ম।
মার্কিন ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন আইনের (এফএআরএ) অধীনে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, গত ৩১ জুলাই ডিসিআই গ্রুপ জান্তাশাসিত মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ওইদিনই একটি বেসরকারি নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ‘নামকাওয়াস্তে’ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২০২১ সালে সামরিক বাহিনী প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের জান্তা সরকার ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে ইসরায়েলি-কানাডীয় এক লবিস্টকে নিয়োগ দিয়েছিল।
তবে ওই লবিস্ট পরে জানান, জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন না, যে কারণে তিনি মিয়ানমারের হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ডিসিআই গ্রুপ ও মিয়ানমারের মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তিতে বাধা সৃষ্টি করবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিসিআই গ্রুপ ও মিয়ানমারের ওয়াশিংটন দূতাবাসে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও কারো কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটিতে ক্ষমতা জান্তার কাছ থেকে একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে গেলেও সেখানে ‘স্ট্যাটাস ক্যু’তে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। হ্লাইং এখনও ক্ষমতার শীর্ষেই রয়েছেন, তিনি এখনও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন, একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের পদও সামলাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বেশ আগ্রহী মনে হচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প যখন তার বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া মিয়ানমারের পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, সেটি দেওয়া হয়েছিল হ্লাইংকে লেখা ব্যক্তিগত এক চিঠিতে।
প্রত্যুত্তরে মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল ট্রাম্পের ‘দৃঢ় নেতৃত্বের’ প্রশংসা করে শুল্কের হার কমাতে ও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে তিনি ওয়াশিংটনে আলোচক দল পাঠাতেও প্রস্তুত।
এফএআরএ-তে দেওয়া নথিতে ডিসিআই গ্রুপ বলেছে, তারা ‘বাণিজ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবিক সহায়তা বিষয়কে কেন্দ্র করে’ মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক মেরামতের লক্ষ্যে মক্কেলকে (মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়) ‘জনসংযোগ সম্পর্কিত সেবা’ দেবে।
নথিতে ১ অগাস্ট স্বাক্ষর করেন ডিসিআইয়ের দুই ম্যানেজিং পার্টনার জাস্টিন পিটারসন ও ব্রায়ান ম্যাককেব। এর মধ্যে পিটারসন আগের ট্রাম্প প্রশাসনে ছিলেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা খনিজে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রশাসনের চোখ পড়েছে বলে গত কিছুদিন ধরে একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। প্রযুক্তি ও সামরিক খাতের জন্য বিরল মৃত্তিকা খনিজ খুবই জরুরি উপাদান। কিন্তু এসব খনিজের প্রক্রিয়াজাত সক্ষমতার প্রায় ৯০ শতাংশই চীনের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের মৃত্তিকা খনিজ নিয়ে ওয়াশিংটনের আগ্রহ থাকলেও তা পেতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক ধরনের লজিস্টিকাল ও ভূরাজনৈতিক বাধা অতিক্রম করতে হবে।
গত মাসে মার্কিন প্রশাসন জান্তার মিত্র বলে খ্যাত একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মিয়ানমার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এমন ইঙ্গিত দেয় না। এর সঙ্গে জান্তাপ্রধানের চিঠিরও কোনো সম্পর্ক নেই।
গত বছর রয়টার্স এক প্রতিবেদনে লবিস্ট ফার্ম ডিসিআই গ্রুপের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের তদন্তের খবর দিয়েছিল। এক্সন মোবিলের শত শত সমালোচককে লক্ষ্য করে হওয়া হ্যাকিং ও তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ডিসিআই জড়িত ছিল বলে সন্দেহ মার্কিন এ তদন্ত সংস্থার। ডিসিআই গ্রুপ এক্সন মোবিলের হয়েও কাজ করে।
লবিস্ট এ ফার্মটি বলেছে, তারা ওই হ্যাকিং করিয়েছিল বলে যে অভিযোগ তা পুরোপুরি মিথ্যা। তারা তাদের সব কর্মী ও পরামর্শককে আইন মেনে চলতে বলে।
মিয়ানমারের আগের সামরিক জান্তার হয়ে ডিসিআই গ্রুপের সঙ্গে কাজ করার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ২০০৮ সালে সেসময় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাককেইনের দুই শীর্ষ সহযোগী পদত্যাগ করেছিলেন। ডিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং পার্টনাল জিম মারফি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্পের ন্যাশনাল পলিটিকাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।