সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ 

RisingBD – Home

গত বছর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী—এমন ইঙ্গিতকে তারা ‘দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীনভাবে’ প্রত্যাখ্যান করে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, “তারা (সরকার) স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে এই মৌলিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য সকল অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান তারা।”

তবে তিনি নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সাম্প্রতিক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যের সুবিধাপ্রাপ্তির অবস্থা সম্পর্কে উত্থাপিত উদ্বেগকে স্বীকার করেন।

প্রেস সচিব বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম সংস্থার সম্পাদকীয়, পরিচালনাগত বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি।”

তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রেসপন্স টু নোয়াব: সেটিং দ্য রেকর্ড স্ট্রেইট’ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমরা ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও ব্যতিক্রমী সংযম ব্যবহার করেছি।”

তিনি আরো বলেন, “টেলিভিশন টক শো এবং কলামগুলোতে প্রায়শই এই সরকার সম্পর্কে মিথ্যা এবং উসকানিমূলক দাবি প্রকাশিত হয়েছে।”

শফিকুল আলম বলেন, “তবুও, আমরা সেন্সর করিনি বা প্রতিশোধও নিইনি।”

“আমরা অভিযোগ করিনি, এমনকি উসকানি দেওয়ার পরেও লাইসেন্স স্থগিত করিনি, বরং অতীতের শাসনামলে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমের পুনঃপ্রকাশ বা সম্প্রচারে ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করেছি।”

তিনি বলেন, “এটি স্পষ্টতই বাকস্বাধীনতা এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।”

সরকারে প্রবেশাধিকার অবাধ রয়েছে

সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, “সাংবাদিকদের আমাদের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে উন্মুক্ত ও সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি।”

“আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ তা প্রতিফলিত করে।”

সচিবালয় প্রবেশ প্রক্রিয়ার সংস্কার

“সংশোধিত প্রবেশাধিকার ব্যবস্থার সমালোচনা কেবল ভুলভাবে উপস্থাপন করা নয় বরং ভুল তথ্যও,” প্রেস সচিব বলেন।

তিনি বলেন, “আগের ব্যবস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যার ফলে প্রবেশাধিকারপত্রগুলো এমন ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়, যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার কাজ নেই। তাদের মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদ, লবিস্ট এবং সুবিধাবাদী ছিলেন—যারা বিশেষভাবে প্রাপ্ত প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে নীতিকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।”

শফিকুল আলম বলেন, “আমরা সেই ভঙ্গুর কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং এটিকে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি, যা প্রতিটি প্রকৃত সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করবে।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার স্থলে সততা স্থাপন করার জন্য ছিল।”

প্রেস সচিব বলেন, “আগের প্রবেশাধিকার নীতিতে স্বীকৃত সাংবাদিকদের সরকারের সুরে গান গাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আগের নীতিমালায় সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু অপমানজনক ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করেছে।”

“বর্ধিত নবায়ন সময়সীমার সঙ্গে নতুন স্বীকৃতিপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে,” উল্লেখ করেন আলম।

চাকরির নিরাপত্তা

শফিকুল আলম বলেন, “এটি স্পষ্টভাবে বলা উচিত, যেসব সাংবাদিককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারি নির্দেশে নয়। বরং গণমাধ্যম মালিকদের নেওয়া সম্পাদকীয় এবং কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফলে তা করেছেন।”

তিনি উল্লেখ করেন, “এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশ বা চাপ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন ঘটায়।”

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: একটি পারস্পরিক দায়িত্ব

শফিকুল আলম বলেন, “তারা সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি বলেন, “নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার। তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সরকার ও এর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।”

নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি তাদের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিনি বলেন, “এই বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ সহ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি করা যায় এবং সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ের কারণে সৃষ্ট স্ব-সেন্সরশিপ কমানো যায়।”

প্রেস সচিব বলেন, “সরকার প্রস্তাবিত আইনটি জারি করার কথা বিবেচনা করছে।”

শিল্পের মধ্যে প্রতিফলনের আহ্বান

শফিকুল আলম বলেন, “যদিও আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নোয়াব দোষারোপ করার আগে নিজেরাই দেখুক।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “তাদের অবশ্যই তার নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড যাচাই করতে হবে এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষ করে যখন মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার, পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে।”

শফিকুল আলম বলেন, “একটি সূক্ষ্ম সংকটকালীন সময় তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে তারা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে—তা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো বজায় রেখেছে।”

প্রেস সচিব বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা মেনে চলি।”

তিনি বলেন, “নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক পক্ষগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়, তাহলে তা আরো বেশি গুরুত্ব পাবে।”

শফিকুল আলম বলেন, “ঘটনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না, তারা কেবল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।”

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *