Photos from Hill Voice's post

Hill Voice on Facebook

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সময় সূচিভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি

হিল ভয়েস, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রাম: দেশের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ব্যানারে হওয়া এই কর্মসূচিতে বক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানায়।

গণসংযোগের এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ঐক্য ন্যাপ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (জেএসএস–সমর্থিত), ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এটি নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা, লালদীঘি মোড় ঘুরে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘২৭ বছর হয়ে গেল পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার বরাবর টালবাহানা করে যাচ্ছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখতে চাই না। আজ পাহাড়িরা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ পাহাড়ে সেনাশাসন পরিচালনা করে সেখানকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি। ভারত প্রত্যাগত জুন্ম শরণার্থীদের ভূমি প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমতলের আদিবাসী ও তাদের অধিকার সংরক্ষণে।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও আদিবাসীরা আজও আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ‘আমরা চাই না পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার শান্তি বাহিনী সৃষ্টি হোক। পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকেরা তাদের অধিকারের জন্য আবার অস্ত্র ধরুক। অন্তবর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ, এই চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করুন। বাংলাদেশে যে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে সেগুলোর অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে হবে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘পাহাড়ের সমস্যা শুধু পার্বত্যবাসীর সমস্যা নয়। এটি সব বাংলাদেশি নাগরিকের সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা হচ্ছে ভূমি। এটি সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যাঁরা উদ্বাস্তু হয়েছিলেন, শরণার্থী হয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং পরে যারা ফিরেছেন, তাদের সবাইকে পুনর্বাসন করতে হবে। এই সমস্যা গত ২৭ বছরে সমাধান হয়নি।পাহাড় ও সমতলের সব মানুষের যে বৈষম্য ও ভেদাভেদ রয়েছে, এটি দূর করার উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি জিইয়ে রেখে বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণ সম্ভব নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের উচিত পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশে বৈষম্য দূরীকরণে পাহাড়ের মানুষদের পাশ কাটিয়ে দেশকে শান্ত রাখা যাবে না।

সমাপনী বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক ও কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের পাহাড়ি জনগণ, আমাদের আদিবাসী, আমাদের বাঙালি জনগণ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলে এক আনন্দের বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে থাকবে না হানাহানি, খুনোখুনি, জাতিবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ। এমন এক শান্তির আলোর বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার নেতা তাপস হোড়, চট্টগ্রাম বাসদের নেতা আল কাদেরি জয়, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, যুগ্ম সম্পাদক পাহাড়ি ভট্টাচার্য, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সুভাষ আইচ, আদিবাসী ফোরামের নেতা শরৎ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশ জাসদের চট্টগ্রামের নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, বাসদের চট্টগ্রামের ইনচার্জ আল কাদেরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দালনের অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, দীপায়ন খীসাসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় গণসংযোগে নেতা–কর্মীরা জনগণের কাছে চুক্তি বাস্তবায়নের সপক্ষে প্রচারপত্র বিলি করেন। এই পত্রে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া সাতটি দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১. সূচিভিত্তিক পরিকল্পনা করে চুক্তি বাস্তবায়ন করা,

২. আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় শাসন নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক তা বাস্তবায়ন করা,

৩. ভারতে প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা,

৪. দেশের মূল অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা,

৫. স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আসন রাখা ও

৬. সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা ইত্যাদি।
https://hillvoice.net/en/bn/2025/02/%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ad%e0%a7%8c%e0%a6%ae%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0/

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *