Photos from Hill Voice's post

Hill Voice on Facebook

ছাত্র সমাজকে গ্রামে ফিরতে হবে, শেকড়ের কাছে যেতে হবে- পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঊষাতন তালুকদার

হিল ভয়েস, ২০ মে ২০২৫, রাঙ্গামাটি: আজ ২০ মে ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৯তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে রাঙ্গামাটির জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলোচনা সভায় উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘ক’ অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ম্রানুসিং মারমা প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সদস্য সৈসানু মারমা।

আজ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ঊষাতন তালুকদার। এসময় জাতীয় সংগীত ও সংগঠনের দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ। আলোচনা সভার শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা নিজেদের জীবন আত্মোৎসর্গ করেছেন তাঁদের স্মরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার বলেন, আজ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ৩৬ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। চেতনার অন্ধকারকে তাড়িয়ে সংগ্রামের আলো হাতে নিয়ে জুম্ম ছাত্র সমাজকে হাঁটতে হবে। শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে এম এন লারমারা যেভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, আজকের ছাত্র সমাজকেও সেভাবে গ্রামে ফিরতে হবে, শেকড়ের কাছে যেতে হবে। ছাত্র যুব সমাজ তথা গণমানুষকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রত্যেক কর্মীকে সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান রেখে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করতে এই চুক্তির বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। এই চুক্তির পেছনে বহু মানুষের আত্মত্যাগ রয়েছে কিন্তু এই চুক্তির বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর মদদে ইউপিডিএফ নামে একটা প্রতিক্রিয়াশীল দলের উত্থান হয়। জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে ভূলন্ঠিত করতে এই ইউপিডিএফ আমাদের জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভেদ ঢুকিয়েছে। সেই বিভেদপন্থীরা এখনো দেশে বিদেশে নামে-বেনামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে চুক্তি তথা জুম্মদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বিপথে ধাবিত করার পাঁয়তারা করে বেড়াচ্ছে।

শ্রী তালুকদার বলেন, আগের সরকারগুলোর মত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় ভুল নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এই সরকার সকল জাতিগোষ্ঠী, সম্প্রদায়কে তার তথাকথিত অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থায় আনতে সক্ষম হয়নি। যার কারণে আদিবাসীদের দুর্দশা, তাদের বঞ্চনার এখনো শেষ হয়নি, উপরন্তু আরও বেড়েই চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানেও এই সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনও আন্তরিকতা দেখতে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, জুম্মদের মধ্যে একক কোনো জাতি বা সম্প্রদায় অধিকার পেতে পারে না, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়েই স্বাধিকার অর্জন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে আমাদেরকে কেউই অধিকার না দিয়ে থাকতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আগামীর দিনগুলো জুম্মদের জন্য আরও কঠিন হতে যাচ্ছে। লড়াই-সংগ্রামের সামনের সারিতে পিসিপিকে অধিক জোরালোভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। আজকে আশার বাণী হলো পার্বত্য জনপদের ছাত্র সমাজ জেগেছে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। পিসিপি তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কঠোর লড়াইয়ে ছাত্র সমাজকে নিয়ে এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘ক’ অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, ছাত্র ও যুব সমাজ হলেন আমাদের আলো, আমাদের পথের দিশারি। জনগণের আন্দোলনে এই অগ্রণী ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। একমাত্র শিক্ষিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণই জনগণের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সমগ্র দেশ যখন ক্রান্তিকাল পার করছে আজকে সেই সময়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ৩৬ বছরে পদার্পণ করলো। ৩৬ বছরের পথচলায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বহু ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করেছে যা ছাত্র সমাজের সংগ্রামী চেতনাকে আরও শাণিত করবে। আজকে ছাত্র সমাজকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উত্থানের ইতিহাস এবং তার প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে বাস্তবায়ন না করে পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র হত্যা, ধর্ষণ, গুম, হয়রানি, ভূমি দখলের মতো ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এসবের কোনোটির সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা আইনশৃঙ্খলার প্রতি জুম্মদের বিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে চুক্তি বাস্তবায়নকে স্তব্ধ করে রেখেছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে নানা উপায়ে। চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে যে জটিল করানো হচ্ছে তার খেসারত এই রাষ্ট্রকেই একদিন দিতে হবে। আজ হোক কাল হোক চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, পিসিপি এ অঞ্চলের মানুষের ভ্যানগার্ড। অসচেতন ছাত্র সমাজকে জাগ্রত করবে এই পিসিপি। জনগণকে আন্দোলনের অভিমুখে পরিচালনা করবে পিসিপি। পিসিপিই হবে আসন্ন লড়াইয়ের কারিগর।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩ যুগে পদার্পণ জুম্ম ছাত্র সমাজ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণমানুষের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। এই সংগঠন তার দীর্ঘ সময়ের পথচলায় জুম্ম জনগণের সুখ-দুঃখে, লড়াই সংগ্রামে, প্রতিবাদ, প্রতিরোধে সাথী হিসেবে কাজ করে আসছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে এসেও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী জুম্ম ছাত্র সমাজ তথা জুম্ম জনগণকে পুনরায় দ্বিধা বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী এসব প্রতিক্রিয়াশীল কার্যক্রমকে প্রতিহত করে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতরভাবে অংশগ্রহণ করা ছাত্র সমাজের অবশ্যম্ভাবী কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ম্রানুচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দেলনে রাজপথের ময়দানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্ম। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকে পিসিপির ৩ যুগের পথচলা পাহাড়ী ছাত্র সমাজকে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আরও অধিকতর ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি পাহাড়ের নারী সমাজ তথা জুম্ম ছাত্র ও তরুণ সমাজকে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

এছাড়াও ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৯তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে পিসিপির এক প্রচারপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি পিসিপি নিম্নোক্ত আহ্বান জানানো হয়-

১। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হউন।

২। সকল প্রকার বিভেদ ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জুম্ম জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করুন।

৩। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবন ও সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিন এবং তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করুন।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরকারের প্রতি পিসিপি নিম্নোক্ত দাবিসমূহ জানিয়েছে-

১। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন কর।

২। আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও নারী নিপীড়নের বিচার নিশ্চিতকরণে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন কর।

৩। পাঠ্যপুস্তকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক ও আদিবাসীদের জাতিগত ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন কর।

৪। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা ব্যবস্থা চালু কর।

৫। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহপূর্বক শিক্ষক, পরিবহন ও আবাসন সংকট নিরসন কর।

৬। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব উপলক্ষে সকল প্রকার পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ দিনের ছুটি চালু কর।

সংগঠনটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87-%e0%a6%ab%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%a4/

Hill Voice #ChittagongHillTracts Voice Of PCP – কেওক্রডং #indigenous #virals #tranding

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *