Photos from Hill Voice's post

Hill Voice on Facebook

পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার জন্য পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি: চট্টগ্রামে কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবসের সমাবেশে বক্তারা

হিল ভয়েস, ১৩ জুন ২০২৫, চট্টগ্রাম: গতকাল ১২ জুন ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) নিম্ন আদালতে কল্পনা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে এবং অপহরণ ঘটনায় অভিযুক্ত লে. ফেরদৌস, মো: সালেহ আহম্মেদ, মো: নুরুল হক এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি মোড়ে বিকাল ৪ ঘটিকায় এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম, আদিবাসী মহিলা ফোরামের যৌথ উদ্যোগে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক অপূর্ব চাকমার সঞ্চালনায় এবং পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন চাকমা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি টিকলু দে, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ চাকমা, আদিবাসী মহিলা ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি চিজিপুদি চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে কল্পনা চাকমার ২৯তম অপহরণ দিবসে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য আবৃত্তি দেওয়ান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা।

অন্বেষ চাকমা বলেন, আমরা যারা নায্য অধিকার দাবিতে কথা বলছি তাদেরকে দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হুমকি, মামলা, গুম-অপহরণের শিকার হতে হয়। এই মুহূর্তেও পাহাড়ে বিভিন্ন প্রান্তে জুম্ম নারীরা হয়তো রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা সেটেলারদের দ্বারা সম্ভ্রমহানির শিকার হচ্ছে অথবা আতংকে দিন অতিবাহিত করছে। তরুণ সমাজকে কল্পনা চাকমার প্রতিবাদী আদর্শকে ধারণ করে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

টিকলু দে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশের আদিবাসী সমাজও আশা করেছিল সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু স্বাধীন দেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিয়ে বাঙালি হবার কথা বলেন। ‎আজকের দিনেও কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের যেখানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা সেখানে রাষ্ট্র দোষীদের চাকরির পদোন্নতি দিয়েছে। অধিকার আদায়ের আগামী দিনের কঠোর আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

‎উলিসিং মারমা বলেন, পাহাড়ের জনগণ যখন নিজ অধিকার-স্বাধিকারের কথা তুলে তখন তার কন্ঠকে রোধ করার চেষ্ঠা করে এই রাষ্ট্রযন্ত্র। পাহাড়ে এই বিচারহীনতার মূল কারণ পাহাড়ের জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক অধিকার না থাকা। কল্পনা চাকমা অপহরণের আজ ২৯ বছরেও বিচার না হওয়া এবং চিংমা খিয়াং এর মৃত্যুর মামলার এখনো সুষ্ঠু বিচার না হওয়া এই বিচারহীনতার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে রাষ্ট্র যদি মনে করে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পেরেছে তাহলে রাষ্ট্র ভুল করছে। এক কল্পনার খোঁজে হাজারো কল্পনা হয়ে আদিবাসী জুম্ম সমাজ আন্দোলন জারি রাখবে। আমাদের পাহাড়ে অধিকারকামী মানুষদের ভুল বুঝিয়ে কৌশলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, পাহাড়ে যদি সত্যিকারে আইনের শাসন থাকতো তাহলে আমাদের কল্পনাকে হারাতে হতো না। কল্পনার মতো তরুণ নারী সমাজকে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অধিকতরভাবে সামিল হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের এই দূরাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি সরকারের কাছে চিংমা খিয়াংসহ পাহাড়ে যত ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মামলা সুষ্ঠু বিচারের আহ্বান জানান।

‎চিজিপুদি চাকমা বলেন, জুম্ম নারীদের নিত্যদিনে চলার পথে হয়রানি, যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। রাষ্ট্রের আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার কারণে আজ জুম্ম নারী সমাজের নিরাপত্তার সংকটে পড়তে হয়েছে। দেশে যদি বাস্তবিক বৈষম্যহীন ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমাদের আজকে এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিছিল করতে হতো না।

স্বাগত বক্তব্যে আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়ের একজন অগ্নিকন্যা কল্পনা চাকমা। তাকে অপহরণ করে শাসকগোষ্ঠী প্রমাণ করেছে তারা আদিবাসীবান্ধব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ওপর ঐতিহাসিকভাবে এই রাষ্ট্রযন্ত্র দমন-নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। আদিবাসীদের ওপর শাসকগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন পরিবর্তন হবে না আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণও থামবে না। চিংমা খিয়াংসহ যাদের সাথে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সুষ্ঠু বিচার করে সরকার তার বৈষম্যহীন নীতির পরিচয় দিক।

সভাপতির বক্তব্যে ‎সুজন চাকমা বলেন, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নীতিকে উপেক্ষা করে তরুণ নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা এক সত্যিকারের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ছিলেন। তার প্রতিবাদী চেতনাকে রুখে দিতে শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত তাকে অপহরণ করে যার বিচার আমরা দীর্ঘ ২৯ বছরেও পাইনি। পাহাড়ের সমস্যার সমাধানে সরকারকে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প অতিদ্রুত প্রত্যাহারপূর্বক পার্বত্য চুক্তির দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এজন্য কঠোর সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে। সমাবেশ পরবর্তীতে এক বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি চেরাগি মোড় হতে প্রেস ক্লাব ভবন ঘুরে আবারও চেরাগি মোড়ে এসে শেষ হয়।
https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0/

(Feed generated with FetchRSS)

Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *